নিজেই রুগ্ন রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নেই কোন সুযোগ-সুবিধা
চিকিৎসা নিতে আসলেই শুনতে হয় নাই আর নাই। এমন চিত্র কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। জনবল, যন্ত্রপাতি, ওষুধ কিছুই নেই এখানে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, এক্সরে-টেকনিশিয়ান, এনেস্থেসিয়া এক্সপার্ট, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার, প্যারামেডিকেল ডাক্তার, নার্স, ওর্য়াড বয় এবং নৈশ প্রহরীর পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি টাকার উন্নতমানের এক্সরে মেশিনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বহির্বিভাগে প্রতিদিন চারজন ডাক্তার রোগী দেখেন। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। আর রোগীর দীর্ঘ লাইন থাকায় মানা হয় না সামাজিক দূরত্ব। একই সঙ্গে করোনায় আক্রান্তদের আলাদা কেবিন, পর্যাপ্ত অক্সিজেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগও করেন ভুক্তভোগীরা।
চিকিৎসা নিতে আসা রৌমারী উপজেলার ইজলামারী গ্রামের শাহিন আহম্মেদ বলেন, দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যদিও ডাক্তারের দেখা পেলাম কিন্তু ওষুধ যা লিখেছেন তা বাইরে থেকে কিনতে হবে। হাসপাতালে নেই।
উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে এক্সরে টেকনিশিয়ান নেই। তাই বাইরে থেকেই করতে হচ্ছে।
রৌমারী হাসপাতালের সিনিয়র অফিস সহকারি আব্দুস সাত্তার জানান, দীর্ঘদিন থেকে রৌমারী হাসপাতালের ডাক্তারসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৬২ পদ ফাঁকা রয়েছে। ২৪ ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ছয়জন। ডেন্টাল সার্জন নেই। পাঁচজনের জায়গায় কনসালটেন্ট একজনও নেই। ২০ জনের জায়গায় নার্স আছেন আটজন। এছাড়াও তৃতীয় শ্রেণির ১৭ এবং চতুর্থ শ্রেণির ১৩ কর্মচারী পদ ফাঁকা রয়েছে। নৈশ প্রহরী নেই একজনও।
রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্ল্যাহ বলেন, জেলা শহর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন উপজেলা রৌমারী। উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু জনবল সঙ্কটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজেই রুগ্ন হয়ে পড়েছে। গাইনি ডাক্তার না থাকায় প্রসূতিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলেও জানান তিনি।
জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। দ্রুতই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের ঘোষণা হলেও এখন পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, জনবল সমস্যা সব জায়গাতেই আছে। এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে, ব্যস্ততার কথা বলে ফোন রেখে দেন তিনি।
মাসুদ রানা/এএইচ/জিকেএস