টাঙ্গাইলে স্ত্রীর অধিকার ও বিয়ের দাবিতে দুই নারীর অনশন
টাঙ্গাইলের সখীপুরে সুলতানা খাতুন (২৪) নামের এক নারী স্ত্রীর অধিকার আদায়ে বিষের বোতল আর কাবিননামা হাতে নিয়ে গত তিন দিন ধরে স্বামীর বাড়ির বারান্দায় বসে আছেন। তিনি ভূঞাপুর উপজেলা সদরের আজগর আলীর মেয়ে।
অপরদিকে সোমবার (২ আগস্ট) সকাল থেকে কালিহাতীতে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন শুরু করেছেন এক কলেজছাত্রী। তিনি সখীপুর উপজেলার বাসিন্দা ও সরকারি সা’দত কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার (৩১ জুলাই) থেকে সখীপুর উপজেলার দাড়িয়াপুর দক্ষিণপাড়া ফাইলা পাগলার মাজার এলাকায় সুলতানা খাতুন (২৪) নামের এক নারী স্ত্রীর অধিকার আদায়ের জন্য অনশন শুরু করেছেন। স্ত্রীর অধিকার না পেলে তিনি সেখানেই বিষপানে আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।
ওই নারী জানান, উপজেলার দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের ফাইলা পাগলার মাজার এলাকার মৃত মোজাফ্ফর মিয়ার ছেলে আবদুর রহিম মিয়ার সঙ্গে গাজীপুর চৌরাস্তায় সেবা এনজিও নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ওই এনজিওতে সুলতানা ছিলেন মাঠকর্মী আর রহিম ছিলেন সহকারী ম্যানেজার। উভয়ের সম্মতিতে তারা ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট সাত লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। সেই থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে গাজীপুর চৌরাস্তার ভাওয়াল কলেজ সংলগ্ন আক্কাছ আলীর বাসায় ভাড়া থাকতেন।
কিছুদিন আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে রহিম বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি দাড়িয়াপুরে চলে যান। এরপর তিনি তার ব্যবহৃত ফোনের নম্বর পরিবর্তন করেন। পরবর্তীতে ওই নারী রহিমের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি তাকে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করেন। পরে ওই নারী স্ত্রীর অধিকার আদায়ে কাবিননামা এবং বিষের বোতল হাতে নিয়ে স্বামীর বাড়ি চলে আসেন। তার আসার খবর শুনে রহিম ও তার পরিবারের লোকজন বাড়িঘরে তালা ঝুলিয়ে অন্যত্র চলে যান।
দাড়িয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য (মেম্বার) শাহিন আহমেদ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
যোগাযোগ করা হলে আবদুর রহিম দাবি করেন, জোরপূর্বক তার সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে দাড়িয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনসার আলী আসিফ বলেন, বিষয়টি মীমাংসার জন্য বুধবার (৪ আগস্ট) উভয় পক্ষের লোকজনকে ডাকা হয়েছে।
অপরদিকে সোমবার (২ জুলাই) সকাল থেকে কালিহাতীতে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করছেন অনার্সপড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। তার বাড়িতে আসার খবর পেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেমিক রবিন।
রবিন কালিহাতী উপজেলার বাংড়া ইউনিয়নের ধুনাইল গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে। অভিযোগ উঠেছে, তরুণীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করছে রবিনের পরিবার।
অনশনরত ওই ছাত্রীর ভাষ্যমতে, পাঁচ বছর ধরে ঢাকা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রবিনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। প্রেমের একপর্যায়ে তারা মাঝে মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ করতেন। তাদের বাড়িতেও আসা-যাওয়া করতেন রবিন। বিয়ের প্রলোভনে রবিন তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন।
তিনি বলেন, রবিনের বাড়ির লোকজন আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। বিয়ে না হয় আত্মহত্যা, এছাড়া এখন আমার আর কোনো পথ নেই বলেও জানান ওই ছাত্রী।
বাংড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসমত আলী জানান, বিষয়টি জানার পরই উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বসার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রীটি এখনো অনশন চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার কালিহাতী সার্কেল শরিফুল হক বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরিফ উর রহমান টগর/এসআর/এএসএম