ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

করোনায় মৃত সন্দেহে প্রতিবেশী-আত্মীয়দের কেউই এগিয়ে এল না

জেলা প্রতিনিধি | গোপালগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৯:১২ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২১

এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করেও বাচাঁনো যায়নি। এরপর সৎকারেও এগিয়ে এল না প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা। অবশেষে মরদেহের সৎকার করলেন টিম লাইফ সাপোর্টের সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাতে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নের বুরুয়া গ্রামে এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে।

মৃত ওই নারীর নাম শিপ্রা বৈদ্য (৪০)। তার স্বামী অসিম বৈদ্য বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে শরীরে জ্বর নিয়েই স্বাভাবিক কাজকর্ম করছিলেন শিপ্রা বৈদ্য। পরে প্রচণ্ড কাশি শুরু হলে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়। এতেও কোনো উন্নতি না ঘটায়
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) ভর্তি করা হয় কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ওইদিনই রাপিট অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ আসে।

পরের দিন সকালে অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডেকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। করোনা সার্টিফিকেট না থাকায় সেখানে ভর্তি না করলে নেয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেও ফিরিয়ে দেয়া হয়। নিয়ে যাওয়া হয় মিটফোর্ট হাসপাতালে। সেখানে অনেক আকুতি-মিনতির পর ভর্তি করলেও শরীর নিস্তেজ ও মারাত্মক অবনতি ঘটায় সকালে রেফার করা হয় ঢাকা মেডিকেলে।

সেখানে গেলে বলা হয় রোগী অক্সিজেন পাবে না কেবল এই শর্তে ভর্তি করা যাবে। পরে ঢাকা থেকে নিয়ে এসে ভর্তি করা হয় গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় মারা যান শিপ্রা বৈদ্য।

অসিম বৈদ্য বলেন, ‘মৃত স্ত্রীকে রাত ৮টায় বাড়িতে নিয়ে আসলে করোনা সন্দেহে কেউ এগিয়ে আসেনি। গ্রামের সমাজপতির কাছে গেলে তিনি বলেন, যেহেতু তার করোনা উপসর্গ ছিল তাই পরিবারের সদস্যদেরই সৎকারের ব্যবস্থা করতে হবে। এই কথায় আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। রাত সাড়ে ১১টায় জানতে পারি টিম লাইফ সাপোর্ট করোনা রোগীদের নিয়ে কাজ করে। এসময় টিম লাইফ সাপোর্টের কলাবাড়ী ইউনিয়ন টিম লিডার সুশান্ত বর্ণিককে ফোনে বিষয়টি জানালে ২০ মিনিটের মধ্যে আমাদের বাড়িতে ছুটে আসেন তারা। টিমের আরেক সদস্যকে নিয়ে তারা সৎকারের যাবতীয় ব্যবস্থা করেন।’

jagonews24

এ ব্যাপারে গ্রামের সমাজপতি ক্ষিতিশ দত্ত বলেন, যেহেতু অসিম বৈদ্যের স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং যেখানে করোনা রোগীরা ছিল তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য তাদেরকে পারিবারিকভাবে সৎকারের নির্দেশনা দেয়া হয়। তাছাড়া এলাকাবাসীও কেউ ওই বাড়িতে যেতে রাজি হচ্ছিল না। পরে জেনেছি টিম লাইফ সাপোর্টের সদস্যরা সৎকারের ব্যবস্থা করে।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য (মেম্বার) মনোরঞ্জন বালা বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় যেতে পারিনি। তবে শুনেছি টিম লাইফ সাপোর্টের সদস্য সুশান্ত বর্ণিক ও নকুল বালা সৎকারের ব্যবস্থা করেছেন।

টিম লাইফ সাপোর্টের কলাবাড়ী ইউনিয়ন টিম লিডার সুশান্ত বর্ণিক বলেন, রাত সাড়ে ১১টার সময় জানতে পারি বুরুয়া গ্রামের শিপ্রা বৈদ্য নামের এক নারী গোপালগঞ্জ হাসপাতালে সন্ধ্যায় মারা যান। গ্রামের লোকেরা করোনা সন্দেহে কেউ মৃতের বাড়িতে আসছেন না। লাশ বাইরে পড়ে আছে। আমার অন্য সদস্যদের ফোনে না পেলে নিজেই সুরক্ষাসামগ্রী পরে ও নকুল বালা নামের এক ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক টিমের সদস্য বানিয়ে ওই বাড়িতে ছুটে যাই।

‘গিয়ে দেখি লাশ বাড়ির উঠানে পড়ে আছে। তবে আমাদের দেখে মৃতের স্বামী অসিম বৈদ্যসহ পরিবারের সদস্যরা ভরসা পান। তখন নিজ হাতে আমরা বাঁশ কেটে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করে সৎকারের ব্যবস্থা করি। আমাদের সঙ্গে পরিবারের লোকজন সহযোগিতা করেন। সব কাজ শেষ করতে রাত ৪টা বেজে যায়’, বলেন টিম লিডার সুশান্ত বর্ণিক।

মেহেদী হাসান/এসআর/এএসএম