নিষ্ঠুর বাবার নির্মম নির্যাতন
গাজীপুরের কালীগঞ্জে পড়ালেখার খরচ চেয়ে বাবার হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে মো. রিমন (৯) নামে এক শিশু। এমনকি তার বই-খাতাও পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে তার বাবা। এসব কথা বলতে গিয়ে শিশুটির মা জেসমিন বেগম বৃহস্পতিবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ও শিশু ওয়ার্ডের ৩নং বেডে আহত শিশু রিমনের পাশে বসে কেঁদে ফেলেন।
আহত রিমনের দাদি নার্গিস খাতুন জানান, উপজেলার পৌর এলাকার মুনশুরপুর মদিনাতুল মনোয়ারা হাফিজিয়া মাদ্রাসার হেফজে খানার ছাত্র রিমন। বিগত দুই বছর যাবত্ ওই মাদ্রাসায় রিমন লেখাপড়া করছে। প্রতি মাসে সব কিছু মিলিয়ে তার ১ হাজার টাকা খরচ দিতে হয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে। গত দুই মাসের টাকা বকেয়া থাকার কারণে রিমনের বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে আনার কথা বলেন মাদ্রাসার হুজুর।
সকালে শিশুটির বাবা কালাম মাদ্রাসার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওই মাদ্রাসার হুজুর মো. আল-আমিন তাকে মাদ্রাসায় ডেকে এনে বকেয়া বেতনের কথা বলেন। এ সময় রিমনও বাবার কাছে বকেয়া বেতন দাবি করে। আর এতে বাবা ক্ষিপ্ত হয় ছেলেকে বাড়ি যেতে বলে। রিমন দুপুরে বাড়ি যায়। এ সময় বাড়িতে কেউ না থাকায় হাত-পা বেঁধে বাঁশ দিয়ে নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন করে।
ঘটনার সময় তার মা জেসমিন অন্য বাড়িতে ছিলেন। শিশুটির চিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করেন। পরে বাবা কালাম শিশুটিকে নিয়ে আবার মাদ্রাসায় যায়। সেখানে গিয়ে রিমনের ট্রাঙ্ক, বই-খাতা ও বিছানাপত্র পুকুরে ছুড়ে ফেলে এবং রিমনকে আবার বাড়ি যেতে বলে। কিন্তু সে বাড়ি না গিয়ে মুনশুরপুর এলাকায় দাদি নার্গিস খাতুনের কাছে যায়। তিনি তার শারীরিক অবস্থা দেখে রিমনকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার চেষ্ঠা করেন। কিন্তু কালাম হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মাকে বাধা দেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় শেষ পর্যন্ত তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
উল্লেখ্য, কালামের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী রিমনের মা এক মেয়ে নিয়ে বেতুয়া গ্রামের থাকেন। আর দ্বিতীয় স্ত্রী সুফিয়া বেগম ও দুই মেয়েকে নিয়ে কালাম মুনশুরপুর গ্রামে ভাড়া বাড়িতে থাকে।
এ ব্যাপারে কালামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, আমার ছেলেকে আমি মারছি। এতে কার কি ? ছেলে অন্যায় করলে শাসন করমো না ? তারে আদর করমো ?
মুনশুরপুর মদিনাতুল মনোয়ারা হাফিজিয়া মাদ্রাসার মুহতামিন মাওলানা মো. আবু হানিফ জাগো নিউজকে জানান, ঘটনার সময় আমি মাদ্রাসায় ছিলাম না। তবে ঘটনাটি শুনেছি। কিন্তু রিমনের ট্রাঙ্ক, বই-খাতা ও বিছানাপত্র পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেয়ার সময় মাদ্রাসার হুজুর আল-আমিন ও আব্দুল গফুর বাধা দিলেও রিমনের বাবা কালাম সে বাধা মানেনি।
আব্দুর রহমান আরমান/এআরএ/আরআইপি