ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঘর নেই, খাবার নেই

জেলা প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১১:৪৮ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫

এক বছরেও পুনর্বাসিত হতে পারেনি রাঙামাটির বগাছড়িতে দুর্বৃত্তদের আগুনে পোড়া ক্ষতিগ্রস্তরা। করতে পারেনি মাথা গোজার ঠাঁই। আজও দুর্বিসহ দিন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। থামেনি কষ্টের কান্না।

বৃহস্পতিবার সকালে পুনর্বাসনের দাবিতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।  

গত বছর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের বগাছড়ির চৌদ্দমাইল নামক এলাকায় দুর্বৃত্তদের আগুনে তিনটি আদিবাসী গ্রামের অর্ধ শতাধিক বসতবাড়ি পুড়ে যায়। গত এক বছরেও ওইসব ঘরহারা দুর্গত মানুষের কষ্ট দূর হয়নি। আজও তাদের কান্নায় ভারি সেখানকার পরিবেশ। নতুন করে উঠাতে পারেননি বাড়ি-ঘর। ঘটনার বিচার, জড়িতদের গ্রেফতার ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন।

এসময় বক্তব্য রাখেন, বগাছড়ি ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি ও বুড়িঘাট ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর কাজলী ত্রিপুরা, ক্ষত্রিগ্রস্ত পরিবারের শান্তি প্রভা চাকমা, ইউপি মেম্বার আনন্দ চাকমা, শিক্ষক সুবিন্ত চাকমা ও তোষণ চাকমা।

তারা দাবি করে বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে সেনা সহায়তায়। ওই ঘটনায় আমাদের উপর ব্যাপক হামলা, বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালান স্থানীয় সেটেলার বাঙালিরা। তারা অবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, জড়িতদের গ্রেফতার ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পুনর্বাসনের দাবি জানান সরকারের কাছে।

কাজলী ত্রিপুরা বলেন, যেই দিন বিজয়ের উল্লাস করার কথা সেইদিন সেটেলার বাঙালিরা আমাদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে অমানুষিক ও পৈশাচিক হামলা চালিয়েছে। এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে আদিবাসী অধ্যুষিত সুরিদাসপাড়ায় স্থানীয় সেটেলার বাঙালিদের আনারস বাগানের চারা কেটে ফেলে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনার জেরে স্থানীয় আদিবাসীদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পরদিন ১৬ ডিসেম্বর সকালে বগাছড়ির চৌদ্দমাইল নামক এলাকায় কাছাকাছি আদিবাসীদের তিনটি গ্রামে আগুন দিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় স্থানীয় সেটেলার বাঙালিদের সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা। আগুনে ভস্মিভূত হয় তিনটি গ্রামের ৬১ বাড়িঘর। ক্ষতিগ্রস্তরা আজও বাড়িঘর করতে পারেননি।

Chain
এদিকে সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্গত লোকজনের বিলাপের কান্নায় ভারি রয়েছে দুর্গত এলাকার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। আজও অনেকে নতুন করে বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ করতে পারেননি। পোড়া টিন দিয়ে করেছেন ছাউনি ঘর। সেখানে নেই খাবার। সহায়-সম্বলহীন সর্বস্বান্ত লোকজন। থামেনি তাদের কান্না। খোলা আকাশের নিচে দুর্বিষহ দিনযাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

আগুনে ঘরহারা সুরিদাসপাড়ার শান্তিরাণী চাকমার (৪৭) জাগো নিউজকে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ঘর নেই, খাবার নেই। জিনিসপত্র কেনার জন্য টাকা নেই। সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত আমরা।

শুধু শান্তি রাণী নয়, ঘরহারা সবার হাল খুবই করুণ। পোড়া টিনের ছাউনি দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ছোট ছোট ঘরে। কাটছে দুর্বিষহ দিন। তিন আদিবাসী গ্রামের পুড়ে যাওয়া ৬১ বাড়িঘর পুননির্মাণের আশ্বাস দেয়া হলেও তা আজও বাস্তবায়ন করেনি প্রশাসন।

সর্বনাশা আগুনে ঘরহারা চঞ্চলা দেবী চাকমা (৩০) জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার পর এলাকায় গিয়ে সরকারি লোকেরা বলেছিলেন আমাদেরকে বাড়িঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘ একটি বছর পার হয়ে গেলেও আজও কোনো বাড়িঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়নি। ঘটনার পর মানুষজনের কাছ থেকে পাওয়া ত্রাণ নিয়ে কতদিন চলবে।

সুরিদাসপাড়ার গ্রাম প্রধান রাম কার্বারি জাগো নিউজকে বলেন, তার গ্রামের ঘর পোড়া মানুষের জন্য সরকারিভাবে এখনো কোনো ত্রাণ দেয়া হয়নি। এ ধরনের কোনো উদ্যোগও নেই। ঘটনার পর প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিল কার্ডের মাধ্যেমে রেশন দেয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো রেশন দেয়া হয়নি।  

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ৬১ পরিবারকে সরকারিভাবে ২২ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১১ ফুট প্রস্থের একটি করে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। ঘর প্রতি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৭ হাজার টাকা। ঘটনার পর প্রথম পর্যায়ে ১৫ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০টি ঘর নির্মাণ করে দেয়ার পর পরবর্তীতে বরাদ্দ না থাকায় বাকিগুলোর নির্মাণ কাজ বন্ধ আছে।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/এমজেড/আরআইপি