ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জয়পুরহাটে চিকিৎসকদের করোনা ঝুঁকির টাকা নিয়ে নয়-ছয়

জেলা প্রতিনিধি | জয়পুরহাট | প্রকাশিত: ০৩:০৬ পিএম, ০৮ জুলাই ২০২১

করোনাভাইরাস মহামারিতে কর্মরত চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি ভাতা এবং করোনা রোগী ও তাদের চিকিৎসার জন্য পরিবহন খরচের ৫০ লাখ টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক জুয়েলের বিরুদ্ধে।

স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য ও সরেজমিন অনুসন্ধানে বিষয়টির সত্যতা মিলেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডা. রাশেদ মোবারক।

গত ২ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ২০২০-২১ অর্থ বাজেটের স্মারক সূত্রে জানা গেছে, গত জুনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেশের ১৪টি জেনারেল হাসপাতালে করোনা মহামারিতে কর্মরত চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি ভাতা এবং করোনা রোগী ও তাদের চিকিৎসার জন্য পরিবহন খরচ বাবদ বরাদ্দের ৭ কোটি টাকা পাঠানো হয়।

ওই বরাদ্দ থেকে জয়পুরহাট জেলা হাসপাতাল পায় ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক জুয়েল একদিনের নোটিশে তড়িঘড়ি করে নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাহিদাপত্র নিয়ে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার অক্সিজেন সিলিন্ডার, আইসিইউ কম্পিউটার মনিটর, সিরিঞ্জ,অক্সিজেন পাম্প মেশিন, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনেন। সংশ্লিষ্ট দরপত্রদাতাদের কাছ থেকে কোটেশনের মাধ্যমে ওই টাকার ছয় ধরনের মালামাল কেনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নিয়মবহির্ভূতভাবে মালামালগুলো কেনা হলেও হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে কেনাকাটার সমুদয় অর্থের চেক ইস্যু করেন বলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সরদার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মালামাল বুঝে পেয়েছে মর্মে ভাউচার জমা দিলে আমরা অর্থ ছাড়ের জন্য চেক দিয়েছি।’

হাসপাতালটির স্টোর কিপারের দায়িত্বে থাকা আব্দুল বাতেন বলেন, ‘আমি মনিটর পেয়েছি, অন্যান্য মালামাল এক সপ্তাহের মধ্যে আসবে বলে জেনেছি।’ তবে তিনি কতগুলো মনিটর বুঝে পেয়েছেন সে বিষয়ে কিছু বলেননি।

বরাদ্দের অর্থ চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিদিনের ভাতা এবং পরিবহনে ব্যয় করার কথা থাকলেও অনিয়ম করে অন্য খাতে খরচ করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতরা।

এ নিয়ে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জাফর ইমাম, ডা. এস এম এহসানুল হক, নার্সিং সুপারভাইজার মাহমুদা চৌধুরী ও সামসুন্নাহার, ওয়ার্ড মাস্টার সেলিম হোসেনসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তিনি কী করেছেন, তিনিই ভালো জানেন।

ওই হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, বরাদ্দের অর্থ তাদের প্রাপ্য ছিল, কারণ তারা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। কিন্তু অনিয়ম করে যেসব মালামাল কেনা হয়েছে, তা সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এছাড়া জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালটির করোনা ও আইসিইউ ইউনিট কেন্দ্রীয় ভাবে অক্সিজেনের আওতায় আনা হলেও অপ্রয়োজনীয়ভাবে নতুন করে অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো কেনা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগী পরিবহনখাতে বরাদ্দের অর্থ অনিয়ম করে অন্য মালামাল কেনায় তারা বিস্মিত। বিষয়টি নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে।

উল্লেখ্য, ১৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে জেলার প্রায় ১৬ লাখ মানুষের একমাত্র আধুনিক চিকিৎসার ভরসাস্থল। জয়পুরহাট ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার ধামইরহাট,পত্নীতলা, বদলগাছী ও দিনাজপুরের হাকিমপুর, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে আসেন।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক জুয়েল বলেন, ‘যা করেছি নিয়ম অনুযায়ী করেছি কোন অনিয়ম হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) জয়পুরহাট জেলার সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রণোদনা দেয়া হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই বরাদ্দ এসেছে। এখানে অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। ব্যাপারটি নিয়ে আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করব।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (হাসপাতাল) ডা. মো. খুরশীদ আলম ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (বাজেট শাখা) যুগ্মসচিব ড. এনামুল হক।

জাগো নিউজকে তারা মোবাইল ফোনে বলেন, ‘সঙ্গে নিরোধক ব্যয়ের টাকা তিনটি খাত ছাড়া অন্য খাতে খরচ করা যাবে না। খাতগুলো হলো করোনাকালীন কর্মরত চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিদিনের ঝুঁকি ভাতা, তাদের পরিবহন ভাতা ও রোগীদের পরিবহন খরচ।’

‘জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক যদি অন্য খাতে ব্যয় করেন, তা সঠিক হয়নি। কারণ এক কোডের অর্থ অন্য কোডে খরচ করা যাবে না। এছাড়া হাসপাতালের অন্য কোনো খরচ থাকলে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে তাকে চাহিদাপত্র দিতে হবে। অনিয়ম করে থাকলে অডিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

রাশেদুজ্জামান/এসএস/জিকেএস