ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বগুড়ায় হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সংকটে ১৩ ঘণ্টায় ৭ রোগীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক | বগুড়া | প্রকাশিত: ০৬:৩১ পিএম, ০২ জুলাই ২০২১

হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার অভাবে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি থাকা ৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার (২ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে তাদের মৃত্যু হয়।

মারা যাওয়া রোগীরা হলেন—জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার রাবেয়া বেগম (৬০), বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মীরা বেগম (৩৫), বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জ পাড়ার আলী জাহিদ (৬৫), নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আবদুল মতিন চৌধুরী (৮২), সারিয়াকান্দি উপজেলার টুকু মণ্ডল (৬৫), শিবগঞ্জ উপজেলার আবদুল হান্নান (৬৫) ও সিরাজগঞ্জ সদরের লিলি চৌধুরী (৫৫)।

রোগী স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহকারী সরঞ্জাম হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সংকটে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সাপোর্ট না পেয়ে রোগীদের মৃত্যু হয়েছে।

বিষয়টি স্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। তারা বলছে, তাদের মোট ৭টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ২টি সচল রয়েছে। বাকি ৬টি বেডে এখন পর্যন্ত হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা লাগানো হয়নি। এ কারণে হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম থাকার পরও উচ্চ শ্বাসকষ্টের রোগীরা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারছেন না।

বিষয়টি বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হয়। কিন্তু কোনো সমাধান দেয়া হয়নি বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন শুক্রবার দেখা গেছে, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে করোনা রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। সেখানে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছেন গাবতলী উপজেলার আজিজুল হক (৬৪)। শয্যা ফাঁকা না থাকায় বারান্দায় রেখে চলছে তার চিকিৎসা। একই অবস্থা গাবতলী উপজেলার আজিজুল হকেরও (৬৪)। তাদের মতো আরও ২০-২৫ জন রোগী এখনো সংকটাপন্ন অবস্থায় এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে মাত্র দু’টি। আরও দু’টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার বরাদ্দ পাওয়া গেলেও তা চালু করা যায়নি। অপর্যাপ্ত সরঞ্জাম নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় ছয়জন রোগী মারা গেছেন। দুই হাসপাতাল মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা ১৩ জন।

নিহত একজনের স্বজন আবুল বাশার জানান, করোনায় আক্রান্ত তার চাচা অতিমাত্রায় শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা (লেভেল) ৭০-এ নেমে এসেছিল। রাত থেকেই শ্বাসকষ্টে তিনি ছটফট করেছেন। তাকে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ করতে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার দরকার ছিল। এ জন্য চিকিৎসক-নার্সের কাছে ছোটাছুটি করেছেন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকের দেখা পাননি, নার্সরাও পাত্তা দেননি। সকালে ছটফট করতে করতে চোখের সামনে তার চাচা মারা গেছেন।

এনামুল হক নামের আরেকজন স্বজন অভিযোগ করেন, তার মায়ের অক্সিজেন লেভেল ৬৮-তে নেমেছিল। তাকে হাই-ফ্লো নজেল ক্যানোলার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করেছেন। কিন্তু হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার ব্যবস্থা করতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা বিশেষায়িত মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে বর্তমানে বেশির ভাগ করোনা রোগীই শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন। রোগীর স্বজনেরা জানান, তাদের রোগীর উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার দরকার। অথচ রোগীকে সাধারণ মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।

তবে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সংকটে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ টি এম নুরুজ্জামান সঞ্চয়।

তিনি বলেন, ‘কেউ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সংকটে মারা গেছেন, এমনটা এখনো দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা আমাকে জানাননি। তবে এখনো একসঙ্গে দুজনের বেশি রোগীকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলায় অক্সিজেন সরবরাহের সক্ষমতা এখানে নেই। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেগুলো হাতে পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন মাস্ক দিয়ে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।’

হাসপাতালে দু’টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে থাকার বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, বেশ আগে বরাদ্দ পাওয়ার পর নিজ উদ্যোগে আমি টেকনিশিয়ান ডেকে এটি চালু করার চেষ্টা করেছিলাশ। তবে সেটি চালু করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরকেও জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘যার কারণে আরও ন্যূনতম ২৫টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা চেয়ে অধিদফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনো সাড়া মেলেনি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অল্পসংখ্যক পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে গত বছর কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। এরপর গত বছরের ২৭ জুন শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করে ২০০-তে উন্নীত করা হয়। তবে গত শুক্রবার পর্যন্ত এখানে করোনা আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিলো ২৩০ জন।

এদিকে, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১০০টি শয্যা রয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার আছে ১২টি।

এএএইচ/জেআইএম