ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ভাসানচরে নেই করোনা

জেলা প্রতিনিধি | নোয়াখালী | প্রকাশিত: ০১:০১ পিএম, ০২ জুলাই ২০২১

সারাদেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও নোয়াখালীর ভাসানচরে এর কোনো লক্ষণ নেই। ফলে চলমান লকডাউন, শাটডাউন, স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন এই শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত নন ভাসানচরের রোহিঙ্গারা।

নোয়াখালীর হাতিয়ার এ দ্বীপে মাঝে-মধ্যে কারও আগমন ঘটলে তাকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দিতে হয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা। বর্তমানে নোয়াখালী জেলায় হাতিয়ার এই দ্বীপে অবস্থান করছেন ১৮ হাজার ৩৪৭ জন রোহিঙ্গা। বর্তমানে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ভাসানচরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেখানে অবস্থান করছে নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশের প্রায় তিন শতাধিক সদস্য। এদের কারও শরীরে নেই করোনার উপস্থিতি। নেই কোনো উপসর্গও।

রোহিঙ্গাদের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সরকার ভাসানচরে স্থাপন করেছে ২০ শয্যার দুটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারসহ সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে করোনার এই মহামারিতে নমুনা পরীক্ষার জন্য জিন এক্সপার্ট মেশিন স্থাপন করে তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিক একটি ল্যাব। এই ল্যাবে প্রতিদিন চারজন রোগীর করোনা পরীক্ষা করে ফলাফল দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে।

ভাসানচরে হাসপাতাল-১ এ ল্যাবের দায়িত্বে থাকা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শাহ নিয়াজ বলেন, ২০২০ সালে ডিসেম্বরে এই ল্যাব স্থাপন করা হয়। আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এখন পর্যন্ত ভাসানচরে কারও করোনা পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়নি। এই ল্যাবে যক্ষ্মার পরীক্ষাও করা যায়। আমরা গত কয়েক মাসে ১০টির মতো যক্ষ্মা পরীক্ষা করেছি।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, নিয়মানুযায়ী হাসপাতালের বহির্বিভাগে কোনো রোগী এলে চিকিৎসকেরা তার লক্ষণ দেখে করোনা পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু ভাসানচরে এখনো করোনার পরীক্ষা শুরু করার প্রয়োজন হয়নি। তবে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে একজন নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তার কিছু উপসর্গ দেখা দিলে তিনি চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে চলে যান।

ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে আসার আগে আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আসতে হয়েছে। আমি এসেছি ৫ জুন। তার আগে আমাকে পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে হয়েছে। করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর আমি ভাসানচরে আসার অনুমতি পেয়েছি। আমাদের সকল সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রে নিয়ম একই। এখন পর্যন্ত ভাসানচরে করোনা নেই। তাই এখানে লকডাউন বা শাটডাউনের প্রয়োজনীয়তার নেই।

এ ছাড়া ভাসানচরে অবস্থান করা সরকারি কর্মকর্তাদের করোনার টিকা দেয়া হয়েছে। এই দ্বীপে অবস্থান করা সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারি কাজে জড়িত সাধারণ লোকদের মধ্যে ৩০০ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হয়েছে ২৮৫ জনকে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গাদের টিকা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নাজিম উদ্দিন বলেন, ভাসানচরে অবস্থান করা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সরকার সেখানে ২০ শয্যার দুটি হাসপাতাল চালু করেছে। এর পাশাপাশি দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এতে আন্ত ও বহির্বিভাগের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। চিকিৎসা সেবা দিতে দুইজন মেডিকেল অফিসার ও দুইজন উপ-সহকারী কমিউনিটি অফিসার, দুইজন স্টাফ নার্স, একজন মিডওয়াইফ, দুইজন ওয়ার্ড বয়, দুইজন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি পাঁচটি এনজিও কর্মীরাও কাজ করছেন।

jagonews24

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান হোসেন বলেন, ভাসানচরে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এরই মধ্যে প্রায় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করেছে। যাতে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এর আগে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসেন। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। তাদের জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরকে আবাসনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে এই দ্বীপে। আছে হাসপাতাল, মসজিদ, খেলারমাঠ, শিশুপার্ক, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম ধাপে এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গার আগমন দিয়ে শুরু হয় ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিক স্থানান্তর কার্যক্রম। এরপরে আরও ছয়টি ধাপে আসা নারী, পুরুষ ও শিশুসহ মোট ১৮ হাজার ৩৪৭ জন রোহিঙ্গা বর্তমানে ভাসানচরে অবস্থান করছেন। প্রতিটি ধাপে আসা রোহিঙ্গাদের ভাসানচর ঘাটেই প্রবেশ পথে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীরা।

ইকবাল হোসেন মজনু/আরএইচ/জিকেএস