‘রামেক হাসপাতালে রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি বলেছেন, ‘এখন রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করাটাই একটি বড় চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালে তিন ট্রাক তরল অক্সিজেন আসে। যার পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার লিটার। এরপরও রামেকের বর্তমান পরিস্থিতিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
শুক্রবার (২৫ জুন) রামেক হাসপাতালে বর্তমানে করোনা রোগীর চাপ, অক্সিজেন সরবরাহ, অক্সিজেনের সার্বিক বণ্টন ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জাগো নিউজকে তিনি এসব কথা বলেন।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘করোনা রোগীর মূল চিকিৎসাই হচ্ছে অক্সিজেন। রামেকে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে, কমার নামই নেই। করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে রামেকে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪২৩ জন। অথচ আমাদের অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে ৩৫৭ জনকে। সিলিন্ডারের মাধ্যমে হলেও সবাইকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। অক্সিজেন সরবরাহ আরও নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আরেকটি অক্সিজেন ‘ভ্যাপোরাইজার’ লাইনও লাগানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রয়েছে ১৮৩টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। বর্তমানে ৭২৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত রয়েছে। আরও ২০০ সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া আইসিইউতে রয়েছে ২০টি শয্যা। অন্যদিকে, ৬৯টি হাই-ফ্লো ন্যাজল ক্যানুলা রয়েছে, যা প্রায় আইসিইউর সমতুল্য।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি বলেন, ‘এতদিন একটি ভ্যাপোরাইজারের মাধ্যমে তরল অক্সিজেন বাষ্পীভূত করে পাইপে ঢোকানো হচ্ছিল। কোনো কারণে লাইনে ত্রুটি হলে দু-এক মিনিটের মধ্যেই বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। এ জন্য চলমান লাইনটা বন্ধ না করে বাইপাস লাইনের মাধ্যমে গত বুধবার আরেকটি নতুন ভ্যাপোরাইজার লাগানো হয়েছে। কিন্তু এর বেশি রোগী এলে তা বর্তমান সরঞ্জামাদি দিয়ে তা মোকাবিলা সম্ভব হবে না।’
রাতারাতি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় তখন কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অক্সিজেনের জন্য সর্বদা বাড়তি প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে, যাতে রোগী বেশি হলেও ব্যবস্থা করা যায়। তবে রাতারাতি রোগী বেড়ে গেলে একসঙ্গে এতজনকে সেবা দেয়া সম্ভব হবে না। এরপরও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আরও দুটি করোনা ওয়ার্ড বাড়ানো হচ্ছে। একইসঙ্গে আমাদের পক্ষ থেকে অক্সিজেন লাইন ও সিলিন্ডার আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।‘
রামেকের প্রতিদিনের করোনা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত চলতি মাসের ২৫ দিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ২৭৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুহার অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই সংখ্যাটি নেহায়েতই কম।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে- জানুয়ারিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের, ফেব্রুয়ারিতে ১৭ জন, মার্চে ৩১ জন ও এপ্রিলে ৭৯ জন। তবে মে মাসে বেড়ে হয়েছিল ১২৪ জন।
শুক্রবার রামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, শ্বাসকষ্টসহ উত্তরের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে মানুষ ছুটে আসছেন হাসপাতালে। সামান্য অক্সিজেনের জন্য ছটফট করছেন অনেকেই। অক্সিজেনের সিলিন্ডার পেলেই নিতে পারছেন নিশ্বাস। তবে সবার কপালে জুটছে না রামেকের সেবা বা অক্সিজেন প্রাপ্তির সুবিধা। যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ৮৮ থেকে ৯০ এর নিচে শুধুমাত্র তারাই পাচ্ছেন অক্সিজেন সুবিধা।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে শুধু তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। বাকিদের ব্যবস্থাপনাপত্র দিয়ে বাড়ি থেকেই চিকিৎসা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ফয়সাল আহমেদ/এসজে/এএসএম