ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সেই শিক্ষককে ক্ষমা করলো মালিহা

প্রকাশিত: ০৭:৪৫ এএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫

অঙ্কে ভুল করার অপরাধে বরগুনায় তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে নিষ্ঠুর ও নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে ক্ষমা করে দিয়েছে নির্যাতিত ছাত্রী মালিহা।

ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বাদলকে শুক্রবার বিকেলে গ্রেফতারের পর, শনিবার সকালে তাকে দেখতে বরগুনা সদর থানায় যান নির্যাতিত ছাত্রী ইসরাত জাহান মালিহা।

এসময় থানা হাজত থেকে বাদলকে মুক্ত করার জন্য মালিহা তার বাবা-মাকে অনুরোধ করে। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে মামলা না করারও অনুরোধ করে মালিহা। যদিও অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য বাদলকে ক্ষমা না করে, শনিবার রাতে তার বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছে মালিহার বাবা।

বরগুনা সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল পৌনে দশটার দিকে মা-বাবাসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে বরগুনা সদর থানায় আসে মালিহা। এরপর থানা পুলিশের অনুমতি নিয়ে তার শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বাদলের সঙ্গে দেখা করার জন্য থানা হাজতের সামনে যায় ছোট্ট শিশু মালিহা।

Malia

এসময় বিমর্ষ বাদলকে থানা হাজতের ভেতরে দেয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে হাজতখানার রডের গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে মালিহা তাকে স্যার বলে ডাক দেন। ডাক শুনে বাদল দৌড়ে এসে হাজতখনার ভেতর থেকে মালিহাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেন। মালিহাও তখন তার স্যারকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কাঁদতে থাকে। বাদল ও মালিহার কাঁদা দেখে পাশে দাঁড়িয়ে তাদের স্বজনরাও কাঁদেন।

মালিহার বাবা মো. জামাল সিকদার জাগো নিউজকে জানান, বাদলকে গ্রেফতারের খবর শোনার পর মালিহা তাকে দেখতে যাওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করে। এ কথা মালিহা তার মাকে বলে। পরে মালিহার মা তাকে জানালে, শনিবার সকালে হাসপাতাল থেকে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে যাবার পথে, বাদলের সঙ্গে দেখা করানোর জন্য মালিহাকে নিয়ে থানায় যান তিনি।

তিনি আরও জানান, আদালত বাদলকে কারাগারে পাঠিয়েছে, এ খবর শোনার পরও মালিহা তাকে কারাগারে দেখতে যেতে চেয়েছে।

ক্যালিক্স একাডেমির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও মালিহা শনিবারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়াও রোববারের পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করেছে মালিহা।

তিনি আরও জানান, শনিবারের গণিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও পরীক্ষা শুরুর মাত্র আধা ঘণ্টা পর অসুস্থ হয়ে পড়ে মালিহা, পরে ওকে ওর মা বাসায় নিয়ে যান।

বরগুনা সদর হাপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আগের চেয়ে মালিহার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

Malia

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে অঙ্ক না পারার অপরাধে বরগুনার কলেজ রোডের বিজয় বৃত্তি কোচিং সেন্টারের পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বাদল ক্যালিক্স একাডেমির তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মালিহাকে অর্ধশতাধিক বেত্রাঘাত করেন। বেত্রাঘাতের এক পর্যায়ে মালিহা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। কিছুক্ষণ পর মালিহার জ্ঞান ফিরলে, বাদল তাকে কাউকে কিছু না বলার জন্য ভয়-ভীতি দেখান।

কোচিং শেষে রাত দশটার পর মালিহা বাসায় ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় মালিহার বাবা-মা তার গায়ে অনেক প্রহারের চিহ্ন দেখতে পান। পরে তারা মালিহাকে নিয়ে বরগুনা সদর থানায় আসেন। এ খবর শুনে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাকও সদর থানায় উপস্থিত হয়ে বাদলকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য তার গাড়িতে করে মালিহাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

ঘটনার পর অভিযুক্ত বাদল গা ঢাকা দেন। বৃহস্পতিবার রাতেই দুই সন্তানসহ বাদলের স্ত্রীকে আটক করে পুলিশ। পরের দিন শুক্রবার বিকেলে বরগুনার নাথপট্টি এলাকা থেকে বাদলকে আটক করার পর তার স্ত্রী ও দুই ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বাদল বরগুনার রোডপাড়া শহিদ স্মৃতি সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বরগুনার কলেজ রোডে বিজয় বৃত্তি কোচিং নামে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে আসছেন।

এর আগেও শিক্ষার্থী নির্যাতনসহ প্রাথমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে তাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আটক করে তার কোচিং সেন্টার সিলগালা করে দেয়া হয়।

মো. সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এমজেড/এমএস

আরও পড়ুন