চুয়াডাঙ্গায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়াতে থানায় আক্রমণ
চুয়াডাঙ্গায় খালিদ মাহমুদ ও আসাদ নামের ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেফতারের পর ছাড়িয়ে নিতে সদর থানা ও পুলিশের ওপর আক্রমণ চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পাঁচটি রাবার বুলেট ছুঢ়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গা থানায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শহরের মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে টহল। বিজিবিকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দার ও পুলিশ সুপার মো. রশীদুল হাসান থানায় বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পুলিশ সুপার থানা চত্বরে এবং হুইপ দলীয় কার্যালয়ে ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রাতে ছাত্রলীগের সদস্যরা পৌর এলাকার সাতগাড়ি গ্রামে বাবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে হামলা চালায়। খবর পেয়ে সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জেলা ছাত্রলীগের সদস্য খালিদ মাহমুদ ও কর্মী আসাদকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাদের সদর থানা হাজতে রাখা হয়। এদিকে দুজনকে গ্রেফতারের খবরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বরসহ বিভিন্নস্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ভাঙচুর চালান। মিছিলকারীরা একপর্যায়ে থানায় প্রবেশের চেষ্টা করলে কর্তব্যরত পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তারা জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশের দাবি, ছাত্রলীগের মিছিল থেকে থানায় ককটেল ও ইট নিক্ষেপ করা হয়েছে। এসময় থানার বাইরেও বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। একপর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচটি রাবার বুলেট ছোড়া হয়।
এদিকে পুলিশের গুলিবর্ষণের পরপরই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দার এমপি ও তার সহোদর পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা থানায় ছুটে যান। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার মো. রশীদুল হাসান সেখানে আসেন। উভয়ের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হয়। গুলিবর্ষণের ঘটনার বিষয়ে হুইপ সোলায়মান পুলিশ সুপারের কাছে ব্যাখ্যা চান। পুলিশ সুপার বিষয়টি তদন্তের পর তাকে জানানোর কথা বলেন। হুইপ এ সময় ছাত্রলীগের গ্রেফতারকৃত দুজনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা থাকলে তাদের আদালতে পাঠানোর পরামর্শ দেন। পাশাপাশি জেলার আলোচিত হত্যা মামলার যেসব আসামি প্রকাশ্যে ঘুরছে, তাদের গ্রেফতারের জন্য বলেন।
রাত সোয়া ১১টায় পুলিশ সুপার মো. রশীদুল হাসান চুয়াডাঙ্গা সদর থানা চত্বরে সাংবাদিকদের জানান, খালিদের বিরুদ্ধে সদর থানাতেই পাঁচটি মামলা রয়েছে। আসাদের বিরুদ্ধে কয়টি মামলা রয়েছে, তা পরে জানানো হবে। তিনি বলেন, খালিদ ও আসাদকে গ্রেফতারের পর তাদের ছাড়িয়ে নিতে ছাত্রলীগ থানায় আক্রমণ করে। ওই সময় নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
রাত পৌনে ১২টায় হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দার তার বাসভবনে সাংবাদিকদের জানান, গ্রেফতার দুজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা থাকলে গ্রেফতারে কোনো আপত্তি নেই। তাদের কোন মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে, তা জানতে জেলা ছাত্রলীগের ২০-২৫ জন থানায় গিয়েছিল। পুলিশ খারাপ আচরণ করলে তারা বিক্ষোভ করেছে। আবার পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে গুলি চালিয়েছে।
তিনি বলেন, শহরে যাতে করে বড় ধরনের কোনো অঘটন না ঘটে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমি নিজে থানায় ছুটে যাই। আমার যাওয়ার খবর পাওয়ার ২০-২৫ মিনিট পর পুলিশ সুপার থানায় আসেন। আমি তাকে বলে দিয়েছি, যাদের ধরা হয়েছে কাল তাদের আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু অনেক আলোচিত মামলার বহু আসামি ঘুরে বেড়াচ্ছে। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করতে হবে।
সালাউদ্দীন কাজল/ এমএএস/পিআর