উত্তরাঞ্চলে আরটিপিসিআর পরীক্ষা বাড়ানোর গুরুত্ব বিশেষজ্ঞদের
উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। করোনার পরিসংখ্যান যখন ভয়াবহ তখন করোনা টেস্টের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এক্ষেত্রে দুই জেলায় বাড়ানো হয়েছে এ্যান্টিজেন র্যাপিড স্টেট।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ্যান্টিজেন র্যাপিড টেস্টের চাইতে আরটিপিসিআর টেস্টের ফলাফল ভালো। সুতরাং, র্যাপিড টেস্ট না করে আরটিপিসিআররের মাধ্যমে করোনা টেস্ট করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে র্যাপিড টেস্টের তুলনায় পিসিআর টেস্টে করোনার পার্থক্য অনেক গুণ বেশি। তাই র্যাপিড টেস্টের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পিসিআর মেশিনে করোনা উপসর্গের রোগীদের টেস্ট বাড়ানোর পরামর্শ সংশ্লিষ্ট মহলের। এতে সঠিক ফলাফলের মাধ্যমে করোনা ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব বলেও গুরুত্বারোপ করেন তারা।
গত ৩০ মে (রোববার) চাঁপাইনবাবগঞ্জে র্যাপিড টেস্ট ও পিসিআর মেশিনের টেস্টের পার্থক্য দেখা গেছে। ৪৫৩ জনের মধ্যে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের ফলাফলে করোনা পজিটিভ মাত্র ৫৪ জন, যার শতকরা হার ১১ শতাংশ। একই দিনে ১৮৮ জনকে পিসিআর মেশিন দ্বারা পরীক্ষায় ১০৭ জনের করোনা পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া গেছে। যার শতকরা হার ৫৭ শতাংশ। সেই তুলনায় পিসিআর মেশিনে শনাক্তের হার পাঁচগুণ বেশি।
একইভাবে গত ৩১ মে (সোমবার) চাঁপাইনবাবগঞ্জে পরীক্ষাতেও ব্যবধান বেশি। এদিনে ২০৩ জনের মধ্যে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের ফলাফলে করোনা পজিটিভ মাত্র ৪৪ জন, যার শতকরা হার ২১ শতাংশ। ঠিক একই দিনে ৬৩ জনকে পিসিআর মেশিনের দ্বারা পরীক্ষায় ৪৫ জনের করোনা পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া গিয়েছে। যার শতকরা হার ৭১ শতাংশ। এতেও রয়েছে বিস্তর ব্যবধান।
রাজশাহীতেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। গত ৩০ মে (রোববার) রাজশাহীতে ১৪ জনের মধ্যে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের ফলাফলে করোনা পজিটিভ মাত্র একজন। যার শতকরা হার ৭ শতাংশ। একইদিনে ১৮৩ জনকে পিসিআর মেশিনে পরীক্ষায় ৬৮ জনের করোনা পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া যায়। যার শতকরা হার ৩৭ শতাংশ। এখানে শনাক্তের হার পাঁচগুণেরও বেশি।
একইভাবে গত ৩১ মে (সোমবার) রাজশাহীতে ২৭ জনের মধ্যে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে পজিটিভ আসে মাত্র ৩৩ জনের, শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ। একইদিনে ৩৬৯ জনকে পিসিআর মেশিনে র্যাপিড টেস্ট করে পরীক্ষায় ১০৮ জনের করোনা পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া গিয়েছে। যার শতকরা হার ২৯ শতাংশ।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, সাধারণত যাদের উপসর্গ আছে, তাদেরই র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের আওতায় আনা হয়। কারণ, দ্রুত টেস্ট করলে করোনা রোগী শনাক্তের মাধ্যমে তার সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধ সম্ভব।
তিনি বলেন, যাদের র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করা হয়েছে তাদের মধ্যে থেকে তালিকা করে আবার টেস্ট করালে সেখানে করোনা পজিটিভ পাওয়া যাবে। শুধু এন্টিজেন টেস্ট করেই আপনি করোনা শনাক্তের শতকরা হার নির্ণয় করতে পারবেন না। এতে ত্রুটি থেকে যাবে। কিন্তু আপনি যদি র্যাপিড টেস্ট পিসিআর মেশিনে করতে পারেন তবেই প্রকৃত পরিসংখ্যান ও রোগী শনাক্ত করতে পারবেন। সেই সাথে করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও দ্রুততার সাথে নেওয়া সম্ভব। তাই আরটিপিসিআর টেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সিভিল সার্জন অফিসার ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে যে রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে সেটি মোটামুটি ভালো ও কাছাকাছি রেজাল্ট দিতে সক্ষম। র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের রেজাল্ট ৯০-৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে আরটিপিসিআর মেশিনের রেজাল্ট ৯৫-৯৮ শতাংশ হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে পার্থক্য প্রায় একই।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি) দুটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তাদের বিষয়গুলো নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে তারা চাইলে পিসিআর মেশিন দিনে দুইবারের বদলে চার বার রান করাতে পারেন। এতে ফলাফল অনেক বেশি পাওয়া সম্ভব।
ফয়সাল আহমেদ/আরএইচ/এমএস