ভারতে না গিয়েও ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত যশোরের ৮ জন
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে যশোরের স্থানীয় ৮ জন রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে কারোরই ভারতে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক বা ইতিহাস নেই।
তাদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও একজন নারী, সবার বয়স ৫৬ বছরের নিচে। যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে সোমবার এই ধরন শনাক্ত হয়। জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদের নেতৃত্বে একদল গবেষক সিক্যুয়েন্সির মাধ্যমে করোনাভাইরাসের ভারতীয় এ ধরন শনাক্ত করেন। ইতোমধ্যে ভারতীয় ধরন শনাক্তের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইইডিসিআর, যশোরের স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
জিনোম সেন্টার থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৯ মে ৪ জনের নমুনা অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৩ জনের নমুনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল এবং অপরজনের নমুনা ঝিকারগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যবিপ্রবির ল্যাবে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ভারতফেরত কোয়ারেন্টিনে থাকা পরবর্তী সময়ে পজিটিভ হওয়ার হার যশোর জেলায় গড়ে ১০ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশে উন্নীত হওয়ায় স্থানীয় সংক্রমণ হয়েছে কি না সেটি জানার জন্য স্থানীয় ৩৬ জনের নমুনা সিকোয়েন্সিং করে ভারতীয় ধরন শনাক্ত করা হয়।
যবিপ্রবির গবেষক দলটি জানান, ই১.৬১৭.২ নামের ধরনটি জিনোম সেন্টারে শনাক্ত করা হয়েছে। গত ৮ মে যবিপ্রবির ল্যাবে সর্বপ্রথম ২ জন করোনা রোগীর নমুনায় ভারতীয় এ ধরন শনাক্ত করা হয়। যাশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত ভারতফেরত ৫৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পায়।
ভারতফেরত রোগীদের মধ্যে ৭ জনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ই.১.৬১৭.২ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে দুইজন করোনা পজিটিভ হয়েই দেশে আসেন। কেউ কেউ উপসর্গহীন অবস্থায়ও পজিটিভ হন। যবিপ্রবির ল্যাবে এ পর্যন্ত ভারতফেরত ও স্থানীয়সহ ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন শনাক্ত করা হলো।
গবেষক দলটি জানিয়েছে, গত ২০ ডিসেম্বর এ ধরনটি সর্বপ্রথম ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত এ ধরনটি ইতোমধ্যে বিশ্বের ৬০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরণটিসহ সকল ভারতীয় ধরনকে উদ্বেগের ধরণ বলে আখ্যা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে ভারতীয় এ ধরনটি যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে গেছে। তারা জানিয়েছেন, ফাইজারের ভ্যাকসিন অন্যান্য ধরনের তুলনায় ভারতীয় ধরনে ৩ থেকে ৬ গুণ অকার্যকর। ভারতের একটি হাসপাতালে ৪৮ ভাগ পর্যন্ত এটি শনাক্ত হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ক্ষেত্রে এটি ৬০ ভাগ কার্যকর।
তাদের মতে, ভারতীয় এ ধরনটি ৫০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের সক্ষমতা রাখে। ভ্যাকসিন পরবর্তী ‘সেরাম এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ এ ধরনকে কম শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে। সুতরাং মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অধিবাসীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার আওতায় আনার সুপারিশ করছে গবেষক দলটি।
গবেষক দলটি ভারত থেকে আগত সবাইকে করোনা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রেখে পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ভারতীয় ধরন শনাক্ত হওয়ায় সীমানা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্যিক বা অন্য কোনো কারণে চালক ও সহকারীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও পরীক্ষা করার প্রয়োজন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর এপ্রিল হতে করোনা পরীক্ষা করছে। তার পাশাপাশি করোনার ভ্যারিয়ান্ট নিয়েও কাজ করছে। ভারতীয় নমুনায় পজিটিভ হওয়া মাত্র তার প্রথমে স্যাংগার সিকুয়েন্সিং করা হয়। সেখানে প্রাথমিক ধারনা পেলেই সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয়। তারপর হোল জিনোম সিকোয়েন্সিং করে করোনার ধরন শনাক্ত করা হয়।
জিনোম সেন্টারে ভারতীয় ধরন শনাক্তকরণের গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ড. তানভীর ইসলাম, ড. হাসান মোহাম্মদ আল-ইমরান, অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, শোভন লাল সরকার, এ. এস. এম. রুবাইয়াত-উল-আলম, মো. সাজিদ হাসান, আলী আহসান সেতু প্রমুখ।
মিলন রহমান/এমআরএম