হাতিয়ায় স্থানীয়দের অর্থায়নে হচ্ছে নদীভাঙন রোধের কাজ
ভয়াবহ নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় নিজেদের টাকা দিয়ে ‘নদীভাঙন রোধ প্রকল্পের’ কাজ শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
রোববার (৩০ মে) সকালে হাতিয়া নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে দ্বীপের নলচিরা ঘাটে মিলাদ মাহফিল করে এ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করা হয়েছে।
এতে উপজেলার নলচিরা ঘাটের পাশে প্রায় সাতশ মিটার নদীর তীর এলাকার ভাঙনরোধে নদীতে জিও ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি টাকা। যা স্থানীয়রা নিজেরাই অনুদান দিয়ে ব্যয়ের জোগান দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কাজের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউসের দেয়া ২২ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সরকার গত ২৬ এপ্রিল এক পরিপত্র জারি করে স্বাস্থ্য ও কৃষি সংশ্লিষ্ট ছাড়া সব ধরনের উন্নয়ন কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়ায় প্রকল্পটি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।
এদিকে, নদী উত্তাল থাকায় এর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে হাতিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক কেন্দ্র আফাজিয়া বাজারের কাছে চলে আসায় বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আফাজিয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে নিজস্ব অর্থায়নে নদীতে আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের সিদ্ধান্ত নেন।
এ কাজের উদ্যোক্তাদের একজন আফাজিয়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজহার উদ্দিন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্থানীয়রা নিজেদের জানমালের রক্ষায় নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে তহবিল সংগ্রহে নেমেছেন। পাশাপাশি এ কাজে সর্বাধিক সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীসহ অনেকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরে কাজটির বাস্তবায়নে চার কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য ৫১ সদস্য বিশিষ্ট সংগঠন করে তহবিল সংগ্রহ শুরু হয়। গত এক মাসে ওই তহবিলে ৬৮ লাখ টাকা অনুদানও জমা পড়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী একাই চার লাখ ফুট বালু ও নগদ ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন।’
মোহাম্মদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্থানীয় জনগণের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এর জন্য উদ্যোক্তাদেরকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। দ্বীপের নদী ভাঙন রক্ষায় আমাদের নিজেদেরকেই উদ্যোগী ও সচেতন হতে হবে।’
এদিকে, প্রকল্পটির কাজে গাজীপুরের একটি কারখানা থেকে দুই ধাপে আনা হয়েছে ২৪ হাজার জিও ব্যাগ। বালু ভর্তি ও ডাম্পিংয়ের জন্য রংপুর জেলা থেকে আনা হয়েছে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ৫০ সদস্যের একটি শ্রমিক গ্রুপ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারিগরি সহায়তায় ব্যক্তিগত উদ্যোগের ওই শ্রমিকরাই এই কাজ বাস্তবায়ন করছে।
হাতিয়া নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য সাজেদ উদ্দিন বলেন, ‘৩০ এপ্রিল স্থানীয় আফাজিয়া বাজারে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতিতে এর কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষের আর্থিক অবস্থানুযায়ী অনুদানের টাকা কমিটির কাছ জমা দেয়া শুরু হয়েছে। হাতিয়ায় বসবাস করা লোকজন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকে এ কাজে আর্থিক সহযোগিতা করছেন।’
আর্থিক আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা আনার জন্য যৌথ ব্যাংক হিসাব খোলাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সংগঠনের নামে খোলা হয়েছে একটি পেজ। যাতে প্রতিদিন অনুদান দেয়া লোকজনের নাম, পরিচয় ও টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে পোস্ট দেয়া হচ্ছে বলেও জানান এ স্বেচ্ছাসেবী।
এ বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুহিন বলেন, ‘আমাদের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশী উৎসাহ পেয়েছি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে। তিনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন।’
স্থানীয়দের মতে, গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড হাতিয়ার এই ভাঙন এলাকায় ২৯৭ মিটার জায়গায় পরীক্ষামূলক কিছু জিও ব্যাগ ফেলেছে। তাতে দেখা যায় এক বছরে উক্ত জায়গায় নদীর ভাঙন অনেকটা রোধ হয়েছে। এর ফলে ভাঙন কবলিত মানুষরা মনে করছে শুধু জিও ব্যাগ দিয়েই হাতিয়ার এই নদী ভাঙন অনেকটা রোধ করা সম্ভব।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জামিল আহম্মেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘হাতিয়া নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ কমিটির লোকজন আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। এখানে সবচেয়ে ভালো দিক হলো পানির গভীরতা অনেকটা আছে। তাতে জিও ব্যাগ ফেলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। আমরা একটি ডিজাইন ঠিক করে দিয়েছি। আমাদের একজন প্রতিনিধি সার্বক্ষণিক এই কাজের তদারকি করছেন। আমাদের বাজেট না থাকায় আমরা কাজটি করতে পারছি না। তারা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করছে। আমি তাদের এই কাজকে সাধুবাদ জানাই।’
এসজে/জেআইএম