ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘মঙ্গলবাড়িয়া’ লিচু চাষে ভাগ্য বদল

জেলা প্রতিনিধি | কিশোরগঞ্জ | প্রকাশিত: ১০:২৬ এএম, ১৯ মে ২০২১

গ্রামের নাম মঙ্গলবাড়িয়া। লিচুর নামও তাই। গ্রাম জুড়েই এখানে-ওখানে ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় লিচু গাছ। রাস্তার দুই পাশেও লিচুর বাগান। প্রতিটি গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচু। যেদিকেই চোখ যায় লাল রঙের সমাহার। এমন মন মাতানো দৃশ্য চোখে পড়বে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে।

প্রায় দুশ বছরের প্রসিদ্ধ সুমিষ্ট মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর কদর শুধু দেশেই নয়। ভৌগলিক সীমানা ছাড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী এ লিচুর সুনাম ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের নানা স্থানে। প্রতি মৌসুমে কোটি কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয় এখান থেকে। লিচু চাষে ভাগ্য ফিরেছে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে হাজারও মানুষের। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় লিচু চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।

‘মঙ্গলবাড়িয়া’ লিচু চাষে ভাগ্য বদল

স্থানীয়দের দাবি, দুশ বছর আগে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের মো. হাশিম মুন্সি নামে এক ব্যক্তি চীন থেকে একটি লিচুর চারা এনে তার বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করেন। এভাবে এ উন্নত এ লিচুর জাত ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে।

প্রসিদ্ধ এ লিচুর ভরা মৌসুমে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। দূর-দূরান্তের মানুষ আসছেন লিচু কিনতে। এখান থেকে লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৪৫০ টাকায়।

jagonews24

লিচু কিনতে আসা শহরের জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী বলেন, ‘প্রতি বছরই আমরা এখানে লিচু কিনতে আসি। এখানকার লিচুর স্বাদই আলাদা।’

নরসিংদীর মো. আলমগীর স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছেন লিচু কিনতে। তিনি বলেন, ‘এ লিচুর কথা জানতে পারি অনেক দিন আগে। আজ কিনতে এসেছি। এটা অনেক ভালো লিচু। দেখতে যেমন সুন্দর। খেতেও খুব মজা। তাই দাম একটু বেশি হলেও ৫০০ লিচু কিনেছি।’

jagonews24

পাকুন্দিয়ার মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এই লিচু পাকলে টকটকে লাল রঙ হয়। এর ভেতরে মাংস বেশি এবং বিচি ছোট। খুবই সুমিষ্ট। তাই আমরা এখান থেকে লিচু কিনি।’

মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান পেশা লিচু চাষ। লিচুর আয় থেকেই চলে পরিবারের ভরণ-পোষণ আর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ। মৌসুমের শুরুতে মুকুল আসার পরই চাষিদের কাছ থেকে গাছ কিনে নেন স্থানীয় ব্যাপারীরা। এরপর পরিচর্যা করে গাছের পাকা লিচু বিক্রি করেন তারা। বংশ পরম্পরায় অনেকে জড়িত লিচু আবাদে।

jagonews24

লিচু গাছ মালিক আবু হানিফ বলেন, ‘আমাদের প্রধান ফসল হয়ে উঠেছে লিচু। এর আয় থেকেই পরিবারের ভরণ-পোষণসহ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চলে। এবার আমিরা ১২টি গাছ বিক্রি করেছি এক লাখ টাকায়।’

দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে লিচুর ব্যবসা করছেন মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের ব্যবসায়ী মো. তওহিদ মিয়া। এবারও তিনি প্রায় ২০০ গাছ কিনেছেন। এখন পর্যন্ত ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। আশা করছেন আরও ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবেন।

jagonews24

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. ছাইফুল আলম বলেন, ‘মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার লিচু গাছ আছে। এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের। আগামীতে পুরো জেলায় এ জাতের লিচু আবাদের উদ্যোগ নেয়া হবে।’

কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে লিচু চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।’

নূর মোহাম্মদ/এসজে/জেআইএম