ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মহাস্থানে মিললো গুপ্ত আমলের নানা প্রত্ন নিদর্শন

প্রকাশিত: ০৫:৪২ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৫

আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দূর্গনগরী ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বগুড়ার মহাস্থান গড়ে এবারের খনন কালে বেরিয়ে এসেছে গুপ্ত আমলের নানা প্রত্ন নিদর্শন।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা মতে, এ নিদর্শনগুলো যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও ৬০০ বছর আগের। সে সময় মৌর্য, সুঙ্গ এবং গুপ্ত আমল ছিল। আর বগুড়ার মহাস্থানগড়ে পাওয়া নিদর্শনগুলো গুপ্ত আমলের শেষ দিকে তৈরি করা হয়েছে।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা মঙ্গলবার সকালে জানান, ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ-ফ্রান্সের যৌথ এই খনন কাজ শেষ হয়। মহাস্থান জাদুঘরের দক্ষিণ অংশে বৈরাগীর ভিটায় গত ২৪ অক্টোম্বর থেকে ১৯তম খনন কাজ শুরু করা হয়েছিল। মাসব্যাপি খনন কাজে প্রাচীন আমলের এই প্রত্ন সামগ্রী পাওয়া গেছে।

উদ্ধার করা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- ইটের তৈরি অবকাঠামো, নর্দান ব্ল্যাক পলিশড অয়ার (এনবিপিডব্লিউ) বা উত্তরাঞ্চলীয় চকচকে কালো মৃৎ পাত্রের টুকরা, গুপ্ত আমলের ইটের তৈরি দেয়াল, নকশা করা ইট, টালি, কাচের গুটিকা, মাছ ধরার জালে ব্যবহারের জন্য তৈরি পোড়া মাটির বল, ফুলাংকিত ও পিরামিড আকারের নকশা করা ইটসহ নানা ধরনের নিদর্শন।

bagra

মহাস্থান দূর্গনগরীর মাঝামাঝি এলাকা লইয়েরকুড়ি বা ফ্রান্স মাঠ নামে পরিচিত ভিটার উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত বৈরাগীর ভিটার দক্ষিণ অংশে এবারের খনন কাজ চালানো হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে দুপুরে ২টা পর্যন্ত চলেছে খনন কাজ।

এবারের খনন কাজে ফ্রান্স দলের নেতৃত্ব দেন ফ্রান্স ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্স’র সদস্য ও প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ড. জঁ ফ্রাসোয়া সালস। আর খনন কাজ তত্ত্বাবধান করছেন ফ্রান্সের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক ভিনসেন্ট রিসিবরিসহ সাতজন।

বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা, মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মজিবুর রহমান, শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাচারিবাড়ির কাস্টোডিয়ান হালিমা আফরোজ, মহাস্থান জাদুঘরের সহকারী কাস্টোডিয়ান এসএম হাসানাত বিন ইসলাম, সিনিয়র ড্রাফটম্যান আফজাল হোসেন ও সার্ভেয়ার লোকমান হোসেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, এবারের পাওয়া প্রত্ন সামগ্রীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এনবিপিডব্লিউ যা এলাকার প্রাচীনত্ব সম্পর্কে ধারণা দেয়। তিনি আরও বলেন, এনবিপিডব্লিউ ব্যবহার শুরু হয় যীশু খ্রিষ্টের জন্মের ৬শ’ বছর আগে, তবে এখানে পাওয়া এনবিপিডব্লিউ মৌর্য আমলে ব্যবহার করা হয়।

মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মজিবুর রহমান বলেন, খননে প্রাচীন ইটের যেসব দেয়াল পাওয়া গেছে তা গুপ্ত আমলের শেষ দিকে তৈরি করা হয়েছে। খননের সময় আরও পাওয়া গেছে কাঁচের গুটিকা, মাছ ধরার জালে ব্যবহারের জন্য তৈরি পোড়া মাটির বল, ফুলাংকিত ও পিরামিড আকারের নকশা করা ইট।

খনন সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার অর্থ বরাদ্দ কম থাকায় এবং সময় স্বল্পতার কারণে ৩০ নভেম্বরে খনন কাজ শেষ করা হয়। এবার খনন ও পরিচ্ছন্নতার কাজে ২৮ জন শ্রমিক কাজ করেছেন।

উল্লেখ্য, গত বছর ২০১৪ সালে ১৫ দিনের খনন কালে ২১শ’ বছর আগের তিনটি পাতকুয়া বা রিঙ ওয়েলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। সেই সঙ্গে গৃহস্থলীর কাজে ব্যবহার্য কিছু সামগ্রীও পাওয়া যায়।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্য মতে, মহাস্থান গড় ঐতিহাসিক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে খনন করা হয়। খননের বিভিন্ন পর্যায়ে এখানে বেরিয়ে আসে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রত্ন নিদর্শন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকার যৌথভাবে খনন কাজ পরিচালনা করে আসছে। মাঝে দুই বছর বন্ধ থাকলেও এবার আবারও তা শুরু হয়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে ১৮ দফায় এখানে খনন কাজ চালানো হয়েছে। তবে এবার নিরাপত্তাজনিত কারণে অন্য সময়ের চেয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয় বেশি। সাধারণ মানুষ এমনকি সাংবাদিকদেরও খনন এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। পুলিশ ও র্যাব সার্বক্ষণিক সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরাপত্তা দিয়েছে।

লিমন বাসার/এসএস/এমএস