ভাতার বই যেন সোনার হরিণ!
একটি অর্ধনির্মিত ঘরের সামনে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে ও বসে আছে। দূর থেকে দেখলে যে কেউ ভাবতে পারে ত্রাণ বিতরণ চলছে, ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছে সাধারণ মানুষ। আসলে বিষয়টি মোটেই তেমন নয়। করোনা পরিস্থিতিতেও যারা এভাবে গাদাগাদি করে অপেক্ষা করছেন তারা সবাই বয়স্ক, বিধবা নয়তো প্রতিবন্ধী।
ভেতরে ঢুকলে জানা যাবে এটি তবলছড়ি অবস্থিত রাঙ্গামাটি শহর সমাজসেবা কর্মকর্তার অফিস। তারা সবাই অপেক্ষা করছেন সরকারি বিভিন্ন ভাতার বই সংগ্রহের জন্য। এই বই সংগ্রহ করতে তাদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। অনেকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন। কিন্তু মিলছে না ভাতার বই।
একদিকে করোনা ও রমজান, অন্যদিকে প্রচণ্ড রোদ। ভাতা বই গ্রহীতারা যেহেতু সবাই স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল কিন্তু তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়নি কোনো বসার বা ছায়া সম্বলিত কোনো স্থানের। অনেক সময় শহর সমাজসেবা কর্মীদের দুর্ব্যবহারও সহ্য করতে হচ্ছে তাদের। করোনার সময়ে অফিস কর্তারা তোয়াক্কা করছেন না সরকারি সামাজিক দূরত্বের বিধি নিষেধও। অথচ করোনায় সবচেয়ে ঝুঁকি রয়েছে এই বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের। শহর সমাজ সেবার এমন দুর্ভোগের সেবায় ক্ষুব্ধ ভাতা গ্রহীতারা।
সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ভাতা গ্রহণকারীদের বই জমা নেয় শহর সমাজ সেবা কার্যালয়। বর্তমানে সকল ভাতাভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে সেই ভাতার বইগুলো।
ভাতার বইয়ের অপেক্ষায় থাকা প্রতিবন্ধী অয়ন চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, ‘অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছি। বসার কোনো ব্যবস্থা নাই। নাই কোনো সামাজিক দূরত্বের ব্যবস্থা। সমাজ সেবায় যেন হয়রানি থামেই না।’
অপেক্ষারত বয়স্ক আবু তালেব বলেন, ‘আমাদের কষ্টের কথা কাকে বলব। সেই সকালে আসছি রোদে দাঁড়িয়ে আছি কেউ ভালোভাবে কথাও বলে না। আমাদের দেখার কেউ নাই।’
প্রতিবন্ধী স্কুলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য অবশ্যই ছায়ায় বসার ব্যবস্থা করা উচিত। এ করোনার সময়ে তারাই মূলত বেশি ঝুঁকিতে আছে।’
এ বিষয়ে জানতে রাঙ্গামাটি শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে রাঙ্গামাটি জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক ওমর ফারুক বলেন, ‘আপনার কথা নোট করলাম। আমি বিষয়টি দেখছি।’
শংকর হোড়/এসজে/জিকেএস