দু’লাখ টাকায় রফা হলো ধর্ষণের বিচার
ফরিদপুরের সালথায় বিয়ের প্রলোভনে তরুণীকে একাধিবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ফেলা মাতুব্বর (৩১) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। ধর্ষিত ওই তরুণী এখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে দুই লাখ টাকায় আপোষ করে গর্ভের সন্তান নষ্টের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কতিপয় মাতুব্বর ও সমাজপতিদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষিত তরুণীকে উদ্ধার করে তার গর্ভের সন্তানকে রক্ষার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবক বিদেশ যাওয়ার নামে আত্মগোপনে গেছেন। গর্ভের সন্তান রক্ষায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ধর্ষিত তরুণীও।
অভিযুক্ত ফেলা মাতুব্বর সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের নারানদিয়া গ্রামের বকা মাতুব্বরের ছেলে। ফেলা বিবাহিত।
ভুক্তভোগীর খালাত বোন অভিযোগ করে বলেন, আমার খালাতো বোন মাঝে মাঝেই আমার বাড়িতে এসে থাকত। একপর্যায়ে বছর খানেক আগে আমার বিবাহিত দেবর ফেলার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভনে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। ফলে সে এখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
এলাকাবাসী জানান, ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে জানাজানি হলে তারা ধর্ষিত তরুণীর সাথে বিয়ের জন্য ফেলাকে চাপ প্রয়োগ করেন।
কিন্তু ফেলা বিয়ে করতে কিছুতেই রাজি না হয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক নুরুল ইসলাম মাতুব্বর, আবুল খায়ের, বকুল মাতুব্বর ও সায়েম মোল্যাকে ম্যানেজ করে তাদের দিয়ে ধর্ষিতার পরিবারটিকে আপোষ জন্য ব্যাপকভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। পরে ১৫ এপ্রিল ও ২০ এপ্রিল রাতে ওই প্রভাবশালী মাতুব্বররা পাশের কুমাপট্টি গ্রামে ধর্ষিতা তরুণীর খালু নান্নু মোল্যার বাড়িতে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি গোপনে আপোষের ব্যবস্থা করেন।
এ সময় শুধু ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপাই দেওয়া হয়নি, সালিশে ধর্ষিতার গর্ভে থাকা সন্তানকেও নষ্ট করার সিদ্ধান্ত দেন স্থানীয় ওই সব প্রভাবশালী মাতুব্বররা। একতরফা চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত আর গর্ভের সন্তান রক্ষার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই তরুণী।
এদিকে অভিযুক্ত ফেলা মাতুব্বর বিদেশে চলে গেছেন বলে দাবি করেছে তার পরিবার। তবে এলাকাবাসীর ভাষ্য ফেলা দেশেই পালিয়ে আছেন।
এ ঘটনায় আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মাতুব্বররা বলেন, আমরা সালিশে উপস্থিত ছিলাম স্থানীয়ভাবে। তবে কত টাকায় মিমাংসা হয়েছে তা আমরা জানি না। এটা ওই তরুণীর খালু নান্নু মোল্লা ভালো বলতে পারবেন। আর সন্তান নষ্ট করার সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। এমন কোনো সিদ্ধান্ত সালিশে নেয়া হয়নি।
তবে এ বিষয়ে জানতে ধর্ষিতার খালু নান্নু মোল্লার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুজ্জামান বলেন, নারানদিয়া গ্রামের এই রকম কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সালথা-নগরকান্দা সার্কেল) সুমিনুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে ঘটনা সঠিক হলে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এফএ/এমকেএইচ