সবজি বিক্রি করে সংসার চালান বাসচালক আল আমিন
বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ থানার বাসিন্দা আল-আমিন গত ১৭ বছর ধরে ফেনী শহরে বসবাস করছেন। বাসচালক হিসেবে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। করোনা পরিস্থিতিতে চলমান লকডাউনে গাড়ির চাকা না ঘোরায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
একপর্যায়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে পেশাও পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। গত ১০-১২ দিন ধরে তাকে শহরের মহিপালে ভ্যানগাড়িতে সবজি বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাস চালক আল-আমিন জানান, বেশ কয়েকবছর ধরে হেলপার হিসেবে চাকরির পর গত চার বছর ধরে তিনি সুগন্ধা পরিবহনের চালক ছিলেন। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮০০ টাকা বেতন পেলেও এখন সবজি বিক্রি করে ৩০০-৪০০ টাকা করে বেতন পান।
এ চিত্র আল-আমিনের নয়, ফেনীর প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকের পরিবারে প্রতিনিয়ত জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
একাধিক মালিক ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেনী-ঢাকা, ফেনী-চট্টগ্রাম, ফেনী-সোনাপুর, ফেনী-বসুরহাট, ফেনী-লক্ষ্মীপুর, ফেনী-কুমিল্লা, ফেনী-পরশুরাম, ফেনী-সোনাগাজী, ফেনী-বারইয়ারহাট রুটে বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। এসব পরিবহনে প্রায় ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। গত ৫ এপ্রিল থেকে চলমান লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকার আদেশের পর থেকে তারা কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
অনেক চালক-হেলপার জীবিকার তাগিদে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়া এলাকার ফরহাদ নামের একজন গত কিছুদিন ধরে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করছেন। সেখানে দিনমজুর হিসেবে রোজগার করে সংসার চালাচ্ছেন।
রাজাপুর এলাকার আবুল কালাম নামের একজন মহিপালে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে সবজি বিক্রি করছেন। পরিবহন বন্ধ হওয়ার পর থেকে সেনবাগের বাসিন্দা ইলিয়াছ এলাকায় দিনমজুরি করছেন।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, ফেনী জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপ, আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ফেনী জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ফেনী জেলা বাস, মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন সহ একাধিক সংগঠন থাকলেও গত একমাস ধরে চলা লকডাউনে কোনো শ্রমিকের পাশে দাঁড়ায়নি কেউই। ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবন বিপন্নের পথে।
ফেনী-নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী চারটি সুগন্ধা পরিবহনের মালিক আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, লকডাউন ঘোষণার পর থেকে গাড়ি মালিকরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এসব গাড়ি দেখভাল করার জন্য প্রতিদিন ৫০০ টাকা বেতনে একজন কর্মচারী রাখা হয়েছে।
আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক আজম চৌধুরী বলেন, ‘লকডাউনে সরকারিভাবে কোনো অনুদান না পাওয়ায় শ্রমিকদের কোনো সাহায্য সহযোগিতা করা যায়নি।’
স্টার লাইন পরিবহনের পরিচালক মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রুটে প্রায় ২০০ নিজস্ব পরিবহন চলাচল করে। এসব পরিবহনের কাউন্টার, চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারসহ প্রায় ১ হাজার ২০০ শ্রমিক নিযুক্ত রয়েছেন। বেতন বন্ধ না থাকলেও গাড়ি বন্ধ থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।’
ফেনী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম নবী বলেন, ‘সরকার যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে মার্কেট, বাজার খুলে দিলেও সেখানে যথাযথভাবে তা মানা হচ্ছে না। অথচ বাসেই স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব। তাই অবিলম্বে পরিবহন খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
এসজে/এএসএম