পথেঘাটে তরমুজ-বাঙ্গির বাজার, চড়াদামে কিনতে পারছেন না দরিদ্ররা
বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের নয়াবাজার থেকে মানিকপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কজুড়ে তরমুজ ও বাঙ্গির বাজার বসেছে। সড়কের ধারে গাড়ি থামিয়ে তরমুজ-বাঙ্গি কিনছেন দূর দূরান্তের মানুষ। জমি থেকে সড়কে স্তূপ করতেই খুচরা ক্রেতাদের পাশাপাশি পাইকাররা এসব তরমুজ-বাঙ্গি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
বিভিন্নস্থানে রাতেও ট্রাকে তরমুজ-বাঙ্গি লোড করা হচ্ছে। এতে কৃষক এবং পাইকারদের উভয়ের সুবিধা হচ্ছে। আবার সৌখিন ক্রেতারাও সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে টাটকা তরমুজ কিনতে পেরে অনেক খুশি।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার এসব সড়ক এখন তরমুজের বাজারে পরিণত হয়েছে। শুধু এই সড়কেই নয় উপজেলার চরকাদহ, দাদুয়া, উদবাড়িয়া, ধারাবারিষা, সিধুলী, চলনালী, সোনাবাজু, বিন্যাবাড়ি ঝাউপাড়া এলাকায় বাড়ির সামনে কিংবা মোড়ে মোড়ে এসব বাঙ্গি তরমুজের হাট বসেছে। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। গতবারের চেয়ে এবার চাহিদা বেশি থাকায় কৃষকরা দাম ভালো পেলেও খরায় ফলন ভালো না হওয়ায় তেমন পোষাচ্ছে না বলে কৃষকরা জানান।
মহাসড়কে দেখা গেছে, সিরাজগঞ্জ থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে আব্দুর রশিদ মাস্টার একটি তরমুজ কিনলেন ৩০০ টাকায়। বনপাড়ার জাহাঙ্গীর নামের আরেক ব্যক্তি কিনলেন ৩৩৫ টাকায়। অপেক্ষাকৃত ছোট আরেকটি তরমুজ একজনকে ১৯০ টাকা দিয়েও কিনতে দেখা গেছে। এতে ক্রেতারা ঠকা-জেতা মনে করছেন না।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী হাসেম আলী ও চন্দন মিয়া জানান, রমজান মাসে ইফতারিতে তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখানে তরমুজ কিনতে এসেছেন। ১০০ তরমুজ ১৭ হাজার টাকায় কেনেন তারা। এলাকায় তারা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবেন। এতে তারা লাভবান হচ্ছেন।
অপরদিকে কৃষকের কাছ থেকে তরমুজ পাইকারি কিনলেও হাটে-বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। ৫০ টাকারও বেশি কেজি হওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে গেছে তরমুজের দাম। তাই ইচ্ছা থাকলেও অভাবি মানুষরা তরমুজ কিনে খেতে পারছেন না।
গুরুদাসপুরের চাপকর মধ্যপাড়া এলাকার জামেনা বেওয়া বলেন, ‘আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমে জীবন চালাই। লকডাউনে কাজ না থাকায় ঠিকমতো খেতেই পারছি না। এবার তরমুজের যে দাম তাতে কিনব কিভাবে?’
একই উপজেলার খামানাসকর খোয়ারপাড়ার মিন্টু ড্রাইভার বলেন, ‘লকডাউনে গাড়ি চলছে না। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে ভীষণ কষ্টে আছি। রোজায় ইফতারে তরমুজ খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও কিনতে পারছি না।’
ধারাবারিষার কৃষক আব্দুল লতিফ, শাহিন হোসেন, সোনাবাজু গ্রামের কৃষক মোতাহার জানান, রসুনের গাছ বড় হওয়ার পর গাছের ফাঁকে ফাঁকে বাঙ্গি, তরমুজ ও মিষ্টি কুমড়ার বীজ লাগাতে হয়। এ ফসলের জন্য বাড়তি সার ও কীটনাশক লাগে না। এবছর বাঙ্গি ও তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। বাঙ্গি তুলতে শ্রমিকদের ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি দিতে হচ্ছে। তবে রমজান মাসে বাজারে এসব ফলের চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাচ্ছেন তারা। তাতে রসুন চাষে লোকসান হলেও এসব সাথি ফসলে তারা লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর গুরুদাসপুরে বাঙ্গি ৭২০ হেক্টর, তরমুজ ৫৫৫ হেক্টর ও মিষ্টি কুমড়া ২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। খরায় ফসলের ফলন ভালো হওয়ায় বাঙ্গিতে ২২ হাজার মেট্রিক টন, তরমুজ ২৩ হাজার মেট্রিক টন ও মিষ্টি কুমড়ায় ১৭৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রেজাউল করিম রেজা/এমআরআর/এএসএম