ভারতফেরত যাত্রীদের বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ভোগান্তির অভিযোগ
ভারতফেরত পাসপোর্টযাত্রীরা বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে এসে দীর্ঘ সময় পার করছেন। এতে করে গরমে তারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে। এসব যাত্রীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ওঠেছে।
ভারত থেকে দুই তিনদিন ঘুরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে দেশে ফেরার অনুমতিপত্র এবং করোনা সনদ নিয়ে বেনাপোল চেকপোস্টে এসে পড়ছেন বিড়ম্বনায়। সে দেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া ভুক্তভোগী বাংলাদেশিরা টাকা-পয়সা শেষ করে এখন দেশে ফিরে নিজ খরচে হোটেল ভাড়া এবং খাওয়া-দাওয়া করতে হবে এতে তারা চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি আহসান হাবিব বলেন, বাংলাদেশের উপ-হাই কমিশনারের ছাড়পত্র থাকায় আটকেপড়া যাত্রীরা ফেরার সুযোগ পেয়েছেন। তবে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বাংলাদেশি কোনো পাসপোর্টযাত্রী নতুন করে ভারতে যায়নি কিংবা ভারত থেকেও কেউ বাংলাদেশে আসেনি।
শুক্রবার সকালে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে গেলে দেখা যায়, যাত্রীরা রোদের মধ্যে ৪-৫ ঘণ্টা বসে আছে। আবার স্বাস্থ্য বিভাগের সামনে এবং ভেতরে এতটা ভিড় ছিল যে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই।
ভারতফেরত যাত্রী ঢাকা উত্তরার ফিরোজ আলম বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসা শেষে দুই লাখ টাকা খরচ করে দেশে ফিরেছি। কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনে তিনদিন ঘুরে অনুমতি সনদ নিয়ে ফিরেছি। এসে শুনছি এখন ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। আমাদের আসার সময় যদি করোনার তেমন কোনো জীবাণু দেহে প্রবেশ করে তবে র্যাপিড টেস্ট করা হোক। যাদের জীবাণু থাকবে তাদের কোয়ারেন্টাইনে দেয়া হোক।
নারায়ণগঞ্জে বাড়ি ক্যান্সার রোগী মোকসেদ আলীর (৬১) সঙ্গে যাওয়া শেফালি আক্তার বলেন, আমার পিতা একজন ক্যান্সার রোগী। সকাল ৮টার সময় তাকে নিয়ে দেশে ফিরি। এখন বেলা সাড়ে ১২টা, আমাদের এখানে বসিয়ে রেখেছে। এটা অমানবিক। এই গরমে এভাবে বসে থাকা কি সম্ভব?
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের তাদের সমস্যার কথা বললেও তারা কর্ণপাত করেনি। এ কেমন আচরণ? রোগী নিয়ে যদি ৪-৫ ঘণ্টা রোদে বসে থাকতে হয় তাহলে তো রোগী মারাও যেতে পারে। আর আমাদের দেশে ফিরে যদি কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে তবে কেন ভারত থেকে দূতাবাসের অনুমতিপত্র, কোয়ারেন্টাইন সনদ আনতে হবে?
চাপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা শিশির বলেন, আমার সব টাকা চিকিৎসায় খরচ হয়েছে। এখন শুধু যাতায়াত খরচ আছে। কীভাবে হোটেল ভাড়া দেব? আর কীভাবে খাওয়া-দাওয়া করব?
তিনি বলেন, ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা এদেশে প্রতিদিন প্রবেশ করছে আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে পারছি। তারা করোনা সনদ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে কি? আমরা সরকারের দেয়া সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে সিদ্ধান্তটা কতদূর যৌক্তিক তা বিবেচনা করতে হবে?
খুলনার কালিবাড়ী এলাকার লাবনী সরকার বলেন, যাদের রিপোর্ট পজিটিভ তাদের ১৪ দিন আর যাদের নেগেটিভ তাদেরও ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন এটা ঠিক হচ্ছে না।
এদিকে গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার ভারত থেকে সর্বমোট ফিরেছেন ৬৯১ জন আর ভারতে ফেরত গেছেন ১০৪ জন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে প্রায় ২ শতাধিক যাত্রী ফিরে এসেছে। ভারতে ফিরেছে প্রায় ৩০ জন।
উভয় দেশের মধ্যে আটকেপড়া পাসপোর্ট যাত্রীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে নাভারণ সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীদের স্থানান্তরের দায়িত্ব পালন করছি।
মো. জামাল হোসেন/এমআরএম/এএসএম