ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঘুরছে না রেলের চাকা, থমকে গেছে জীবিকা

শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) | প্রকাশিত: ০৩:২০ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২১

করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এর ফলে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাতেও।

লকডাউন বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার খেটে খাওয়া শ্রমজীবী সাধারণ মানুষরা।

অনেকটাই গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষজন। যে মানুষগুলো ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের টাকা দিয়ে দিনশেষে চাল-ডাল নিয়ে বাড়ি ফিরতেন, সে টাকা কামানোর ‘মেশিনগুলো’ এখন অকেজো হয়ে ঘরবন্দি অবস্থায় অলস সময় কাটাচ্ছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ট্রেনযাত্রী, ফেরিওয়ালা আর ভিক্ষুকের আনাগোনায় কোলাহল মুখর শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশনে শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। যাত্রীহীন এই স্টেশনে যাত্রীদের বসার আসনগুলো খালি পড়ে আছে। যাত্রীদের আনাগোনা না থাকায় স্টেশনের মূল ফটকটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। প্লাটফর্মে অবস্থিত দোকানগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার দেখা মেলেনি।

jagonews24

প্লাটফর্মে জীবিকার তাগিদে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজন, তারা জানান, রেলওয়ে স্টেশনে জুতা সেলাই ও রং করার কাজটি মূলত রেলযাত্রীদের ওপর নির্ভরশীল। কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের লোকজনের ভরণপোষণ নিয়ে দুর্ভোগে দিন কাটছে তাদের।

উপজেলার দাউদ নগর বাজারের চা দোকানের সামনে পান সিগারেট বিক্রেতা মো. হেলালউদ্দিন জানান, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হোটেল রেস্তোরাঁগুলো তেমন চলছে না। এমনিতে তিনি প্রতিদিন এখানে পান সিগারেট বিক্রি করে ২০০-৩০০ টাকা আয় করেন এবং এ দিয়ে তার সংসার চলে। টানা লকডাউনে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ঘরে বসে মূলধন ভেঙে সংসার চালাতে হচ্ছে। লকডাউন উঠে গেলে কিভাবে আবার ওই দোকান চালাবেন এ নিয়ে সংশয়ে দিন কাটছে তার।

রেল স্টেশনের প্লাটফর্মের ক্ষুদ্র দোকানি শাহ আলম বলেন, রেলগাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় আয় রোজগার নাই। এতে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কবে রেলগাড়ি চালু হবে এবং এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে সে প্রহর গুনছেন তিনি।

শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের রিকশাচালক মতিন জানান, এমনিতে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় হতো তার। ট্রেন থামলে অনেক যাত্রী পেতেন তিনি। নিষেধাজ্ঞার কারণে ট্রেন আসে না, এদিকে রাস্তাঘাটেও লোকজনের চলাফেরা নেই। তাই আয় রোজগারও নেই বললেই চলে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে না খেয়ে থাকতে হবে।

jagonews24

শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন সংলগ্ন পুরাতন কাপড় বিক্রেতা করিমুল বলেন, পরিত্যক্ত রেললাইনের উপরে প্রতিদিন পুরোনো কাপড় বিক্রি করি। দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়, তা দিয়ে কোনো রকমে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় ক্রেতা নেই। গত দুই সপ্তাহ আয় না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কবে লকডাউন উঠে যাবে সে প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছি।

নানা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন এসব ক্ষুদ্র আয়ের সাধারণ মানুষ। এভাবেই শত শত ছোট ব্যবসায়ী ও দিনমজুরদের জীবন এখন চলছে নানা সংকটে। একদিকে চলছে রোজা, সামনে আসছে ঈদ। রিকশা, টমটম নিয়ে বের হলেও নানারকম পুলিশি ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয় অটোচালকদের। একরাশ ক্ষুধার যন্ত্রণা বুকে আর স্ত্রী সন্তানদের খাদ্যের খোরাকির চিন্তা তাদের মাথায় ঘুরপাক খায়। তাই পেটের দায়ে তারা বের হন, ক্ষুধা তো আর লকডাউন বোঝে না।

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা আসতেছে, আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। উপজেলায় ও পৌরসভায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে মানবিক সহায়তা পাবেন পৌরসভার ৫০০ জন, ও প্রতি ইউনিয়নে ৫০০ হতদরিদ্ররা। প্রত্যেকে ৫০০ টাকা করে পাবেন তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া ডিজিএফের আওতাধীন পৌরসভায় ৮ হাজার ৬২১ জন ও ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার মানুষ ৪৫০ টাকা করে পাবেন, যারা এই লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।’

কামরুজ্জামান আল রিয়াদ/এমআরআর/এএসএম