বেনাপোলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীদের মধ্যে বাড়ছে করোনা ঝুঁকি
করোনা মহামারির মধ্যে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়ে আটকে পড়েছেন বহু বাংলাদেশি। তাদের অনেকে এখন দেশে ফিরছেন। তবে সীমান্তে অনেকে মানছেন না করোনার সুরক্ষাবিধি। ভারতফেরত যাত্রী ও এপারের মানুষ মিলেমিশে একাকার হচ্ছেন। এর ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে অনেকাংশে।
জানা যায়, গত চারদিনে দেশে ফিরেছেন পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে চারজন করোনা আক্রান্ত। আক্রান্তরাসহ গুরুতর অসুস্থ ১৭ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতোলে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। ভারতফেরত সব যাত্রীকে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখায় আটকেপড়া যাত্রীদের মধ্যে বাড়ছে করোনা ঝুঁকি। নিজ খরচে হোটেলে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। ফলে সুস্থ রোগীদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। বাড়ছে করোনা আতঙ্ক। ক্লান্ত হতাশাগ্রস্ত এসমস্ত যাত্রীদের মাঝে বয়স্ক ও শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন তারা।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ভারত থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিন বেনাপোলের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদিকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের আরটিপিসিআরের করোনা নেগেটিভ সনদ থাকলেও তাদের বর্তমান শর্ত মানতে রাখা হচ্ছে ১৪ দিন আবাসিক হোটেলের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। তবে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ব্যক্তিগত খরচে থাকতে অপারগতা প্রকাশ করেন যাত্রীরা।
ভারতফেরত যাত্রীরা জানান, তারা বেশিরভাগ চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে আটকে পড়েন। পরে কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশি উপহাইকমিশনার অফিসে আবেদন করে ছাড়পত্র নিয়ে ফিরেছেন। তবে বাংলাদেশে আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন তাদের জন্য একদিকে যেমন অনিরাপদ, তেমনি ব্যয়বহুল। প্রতিদিন কক্ষভাড়া ৫০০ থেকে ১ হাজার গুণতে হবে। খাওয়াসহ অনান্য খরচ তো আছে। এ ছাড়া চিকিৎসা সেবার সুযোগ সেখানে নেই। কীভাবে অসুস্থ পরিবার নিয়ে থাকবেন। এজন্য হোম কোয়ারেন্টাইনের আহ্বান জানান যাত্রীরা।
তারা বলছেন, কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসা সুবিধা, রোগীর পুষ্টিকর খাদ্য ও বাথরুমে কমোড সুবিধা নেই। চিকিৎসা শেষে শূন্য হাতে দেশে ফিরে কোয়ারান্টাইনের খরচ চালানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। তাদের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের নিজ বাড়িতে ফেরার সুযোগ দেয়া হোক।
এদিকে সরকারের নিষেধাজ্ঞায় এ পথে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াতে বিধি-নিষেধ ঘোষণা করা হলেও দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক রয়েছে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যি। তবে নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি পালন হচ্ছে না বন্দরে। আমদানি পণ্যের প্রবেশদ্বারে নেই করোনা সংক্রমণ রোধের ব্যবস্থা। পণ্য বহনকারী ট্রাকচালক, শ্রমিক, নিরাপত্তাকর্মীর কেউই যথাযথভাবে মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। এতে ঝুঁকি বাড়ছে সংক্রমণের।
স্থানীয়রা জানান, বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এলাকায় অনেকেই সুরক্ষাবিধি মানছেন না। শ্রমিক, প্রাইভেট চালক, ভ্যান, বাইক ও মোটরসাইকেল আরোহীদের কেউ মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। ভারতফেরত যাত্রীদের একইসঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। তাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা বাড়ছে। এ ব্যাপারে সরকারের উপর মহলের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ভারতের করোনা ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত ভয়ানক। এমনিতেই ভারত থেকে অতি জরুরি অক্সিজেন আমদানি বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে কোনোভাবে একবার এ ভাইরাস দেশে ছড়িয়ে পড়লে মহামারি আকার ধারণ করবে। রক্ষা পেতে সরকারি নির্দেশনার সবার মানা দরকার।’
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘সরকার ইমিগ্রেশন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার পর ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে কলকাতায় বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করছেন। ভারত থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিন বেনাপোলের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।’
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব বলেন, ‘বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনারের ছাড়পত্র থাকায় আটকে পড়া যাত্রীরা ফেরার সুযোগ পেয়েছেন। তবে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বাংলাদেশি কোনো পাসপোর্টযাত্রী নতুন করে ভারতে যাননি এবং ভারত থেকেও কোনো ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে আসেননি।’
বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, ‘বন্দরে বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতরা সবাই যাতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন তার জন্য আবারও সচেতন করা হবে। এ ছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে ইমিগ্রেশন এলাকায় যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব মেনে বসানো হয়েছে। সুরক্ষায় কাজ করছে প্রশাসন।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউছুপ আলম বলেন, ‘গত তিনদিনে (বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত) ৫৩৮ জন বাংলাদেশিকে ইমিগ্রেশন কার্যাদি শেষে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। চারজন করোনা আক্রান্ত রোগীসহ গুরুতর অসুস্থ ১৭ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে।’
মিলন রহমান/ইএ