ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ইউএনওর আত্মীয় বলে কথা!

জেলা প্রতিনিধি | নাটোর | প্রকাশিত: ০৯:৩৬ এএম, ২৯ এপ্রিল ২০২১

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আত্মীয় হওয়ার কারণে নাটোরের লালপুরে সরকারি জায়গা দখল করে দুটি পুকুর খননের অভিযোগ উঠেছে। পানি নিষ্কাশনে ব্রিজের দুটি মুখ বন্ধ করে পুকুর খনন করায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা স্থানীয়দের। এই ঘটনায় শতাধিক কৃষক ওই ইউএনওর বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তবে এলাকাবাসীর করা অভিযোগ অস্বীকার করে পুকুর মালিক জানান, তাদের পুকুরের কারণে পানি প্রবাহের কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। পুকুরের মধ্যে সরকারি জায়গা থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তারা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আড়বাব ইউনিয়নের বিলশলীয়া-সালামপুর সড়কের দুটি ব্রিজ সংলগ্ন বিলশলিয়া বিলে সড়কের উভয় পাশে দুটি পুকুর খনন করেছেন একই এলাকার রাজশাহীতে কর্মরত উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আহমেদ লিংকনের ছোট ভাই আবু সাইদ দুলু।

বিলের জমিতে চাষরত স্থানীয় কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, ব্রিজের পাশে খাস জমি দখল করে পুকুর খননের ফলে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে ব্রিজ দুটির প্রবেশ মুখ। এতে করে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে, ফলে ফসল ডুবে যাবে, তারা কোন ফসল পাবে না। পুকুর মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কারো কোনো কথাই তারা কর্ণপাত করেননি।

ইজাহার আলীসহ সেখানে উপস্থিত একাধিক কৃষক জানান, এই ব্রিজ দিয়ে বিল ও এই বিলের পশ্চিমের কয়েকটি বিলের পানি প্রবাহিত হয়ে চন্দনা নদীতে যায়। কিন্তু পুকুর খননের ফলে ব্রিজের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থত হবে, ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। এমনকি অনেক জমি অনাবাদী হয়ে যাবে। পুকুর খনন বন্ধে অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, শরীফ আহমেদ লিংকন রাজশাহী জেলার একটি উপজেলার ইউএনও। পুকুরটি তাদেরই। এরা প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে মানুষকে জিম্মি করে এসব কাজ করে। স্বাভাবিক কারণে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও কোনো কাজে আসেনি। তাই ঊর্ধ্বোতন বিভাগে অভিযোগ করা হয়েছে। অবিলম্বে এই পুকুর অপসারণ করা না গেলে আগামী বর্ষা মৌসুমে এ এলাকায় কৃষকদের কষ্টের শেষ থাকবে না।

আড়বাব ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, এই পুকুর খননের ফলে এলাকার যে ক্ষতি সাধন হবে তা পূরণ করা অসম্ভব। তাই এটা প্রতিরোধ করা না গেলে এলাকার মানুষ চরম ক্ষতিতে পড়বেন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুকুর খননের ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোনো মতামত নেয়া হয় না। বরং জানতে চাইলে তাদেরকে হুমকি ধামকি দেয়া হয়।

পুকুর মালিক শরীফ আহমেদ লিংকনের ছোট ভাই আবু সাইদ দুলু সাংবাদিকদের জানান, প্রায় ২০ বছর থেকে তারা ওই জমিতে কোনো ফসল পান না, বেশিরভাগ সময় পানি জমে থাকে। তাই সরকারি নিয়ম মেনে এবং প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি নিয়ে তারা পুকুর খনন করেছেন। তার পুকুরের কারণে পানি প্রবাহের কোনো সমস্যা হবে না, পানি নির্বিঘ্নে প্রবাহের জন্য তারা রিং স্থাপন করেছেন। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে তারা পুকুরের পাড় কেটে হলেও পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখবেন।

এছাড়া পাশে একটি খাল ছিল সেটা সংস্কার করলে পানি প্রবাহে কোনো বাধা থাকবে না বলেও দাবি করেন তিনি।

পুকুরের মধ্যে সরকারি খাস জায়গা থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, রাস্তাটি খাস জায়গা দিয়ে না করে তাদের জমির উপর দিয়ে করা হয়েছে তাই স্বাভাবিক কারণে খাস জায়গাটি তাদের জমির মধ্যে চলে আসে।

এ ব্যাপারে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাম্মী আক্তার খাস জমির বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জানান, খাস জমির বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ব্রিজের মুখে যেভাবে পুকুর খনন করা হয়েছে এতে কিছুটা হলেও পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হবে। তবে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে পুকুর মালিক তাদের পুকুরের পাড় কেটে দেবেন বলে জানিয়েছেন তাকে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওই সরকারি কর্মকর্তা ও রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ লিংকনের সাথে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে অনেকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

রেজাউল করিম রেজা/এফএ/এমকেএইচ