৭০ বছর পর মানুষের কোলাহল বসবে ‘অমঙ্গলের’ গ্রাম মঙ্গলপুরে
গ্রামটিতে ফসলি জমি, পুকুর, গাছগাছালি সবই আছে। নেই শুধু মানুষ। সরকারি নথিতে গ্রামটির নাম ‘মঙ্গলপুর’ থাকলেও এখানে কোনো মানুষের বসবাস নেই।
৬৫-৭০ বছর আগে মঙ্গলপুর গ্রামে মানুষের মধ্যে ‘অমঙ্গলৎ’ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায় সবাই। তখন থেকে গ্রামটি মানুষশূন্য হয়ে পড়ে।
গ্রামটির অবস্থান ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে এলাঙ্গী ইউনিয়নে।
ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলপুর গ্রামটি ৬৬ নম্বর মঙ্গলপুর মৌজায় অবস্থিত। এই মৌজায় একটিই গ্রাম রয়েছে। গ্রামে ২০৬টি খতিয়ানভুক্ত জমি আছে। কিন্তু সেখানে কোনো পরিবারের বসবাস নেই।
তবে সেই মঙ্গলপুর গ্রামের ‘অমঙ্গল’ কাটিয়ে ৭০ বছর পর সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে মানুষের বসতি শুরু হতে যাচ্ছে। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে গ্রামটিতে নির্মাণ করা হচ্ছে সাতটি ভূমিহীন পরিবারের জন্য ঘর।
কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে ওই গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। মাস খানেকের মধ্যে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হবে। পাশের বাগডাঙ্গা, পাশপাতিলা ও বলাবাড়িয়া গ্রামের সাতটি ভূমিহীন পরিবারকে এই ঘর দেয়া হবে। তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেরুন নেছা জানান, মঙ্গলপুর গ্রামে সাতটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ প্রায় শেষের পর্যায়ে। এটা মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার। দীর্ঘদিন পর মঙ্গলপুর গ্রামে আবার মানুষের বসতি গড়ে উঠতে যাচ্ছে।
কোটচাঁদপুর এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি মোশারফ হোসেন জানান, ৬৫ থেকে ৭০ বছর আগে মঙ্গলপুর গ্রামে মহামারি আকারে কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেক মানুষ মারা যায়। এ আতংকে গ্রামের মানুষ আশপাশের গ্রামে আশ্রয় নেয়। তবে তারা আর ফিরে আসেনি। আর কিছু পরিবার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে ভারতে চলে যান তখনই।
পার্শ্ববর্তী বলাবাড়িয়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের। গ্রামে যখন কলেরা মহামারি আকার ধারণ করে তখন অনেক মানুষ মারা যায়। ওই সময় গ্রামে একটা কথা ছড়িয়ে পড়ে, ‘গ্রামের খাল-বিল, পুকুর-কুয়ার পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে থাকলে সবাইকে মরতে হবে।’ এই প্রচারের পর গ্রামের মানুষ দল বেধে ভারতে চলে যায়। কিছু মানুষ পাশের গ্রামগুলোতে চলে গিয়েছিল, যারা পরে অন্যত্র চলে গেছেন।
তিনি আরও জানান, সর্বশেষ নেটে ঠাকুর নামের একজন মঙ্গলপুরে থাকতেন, তিনি পরবর্তীতে খুন হলে গ্রামটি সম্পূর্ণভাবে মানুষশূন্য হয়ে পড়ে।
এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও যশোরের চৌগাছা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম মঙ্গলপুর। কিন্তু এই গ্রামে মানুষ বসবাস করে না। তিনি লোকমুখে শুনেছেন, বহুবছর আগে অজানা আতঙ্কে মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। গ্রামটির কথা বর্তমান প্রজন্ম জানে না।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, সাতটি পরিবার ওই গ্রামে বসবাস শুরু করবে। আস্তে আস্তে গ্রামে আরও বসতি গড়ে উঠবে, এই প্রত্যাশা আমাদের।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এফএ/জিকেএস