দুর্নীতির আখড়া মুকসুদপুর সাব-রেজিস্টার কার্যালয়
দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর সাব-রেজিস্টার কার্যালয়। টাকা দিলে কোনো কাজই আটকে না। এখানে নাবালকের সম্পত্তিও রেজিস্ট্রি হয় টাকার জোরে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
গত ১০ মার্চ মুকসুদপুর সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ে একটি দলিল (যার নং ১৬৯৮) সম্পাদিত হয়। এ সাব-কবলা দলিলে দাতা ১১ জন আর গ্রহীতা ৩ জন। জমির পরিমাণ সাড়ে ১৬ শতাংশ। মৌজা পৌরসভার পশ্চিম গোপিনাথপুরের প্রাইমারি স্কুলের পাশে বাড়ি করার উপযুক্ত এসএ খতিয়ান ৪৫৫ দাগ ৫৭৮, বিআরএস খতিয়ান ৬১১ দাগ ৩৬১। জমির বর্তমান মূল্য ৪৪ লাখ টাকা এবং দলিলে বিক্রয় মুল্য লেখা হয়েছে ৩৩ লাখ টাকা। এই জমির মালিক মকসুদপুর উপজেলার নগর সুন্দরদী গ্রামের জিন্নাত আরা বেগম।
স্বামী রফিকুল ইসলাম ১১ জন ওয়ারিশ রেখে ইন্তেকাল করেন। তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুলে শিক্ষকতা করার সুবাদে স্থায়ীভাবে ফরিদপুরে বসবাস করতেন। রফিকুল এবং জিন্নাত আরার সংসারে আজাহারুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম নিলু এবং তাজুল ইসলামকে ওয়ারিশ রেখে ইন্তেকাল করেন। পরে আজাহার হঠাৎ জোবাইদা গুলশান আরা ও কাজল ইসলাম নামে দুই স্ত্রী এবং সাহেবুল ইসলাম, জান্নাতুল ফেরদৌস, ফাতেমা-তুজ জোহরা, সাদিকা ইসলাম, সারা ইসলাম ও সাদিয়া ইসলাম রিয়া নামের সন্তান রেখে ইন্তেকাল করেন।
নগদ টাকার প্রয়োজনে দাদীর ওয়ারিশ হিসেবে জমি বিক্রি প্রস্তাব করায় মুকসুদপুর উপজেলার উজানী গ্রামের বাসুদেবপুর গ্রামের আরফিন সরদারের ছেলে হাফিজুর সরদার, তোতা সরদারের ছেলে মফিজুল সরদার ও চাঁদপুর জেলার মতলব থানার পাদুয়া গ্রামের রুস্তম খায়ের মুন্সীর ছেলে কাউছার আলম জমি কেনার প্রস্তাব করেন।
মিডিয়া হিসেবে কাজ করেন ওই জমির পাশের ওয়ারিশ আরিফুর রহমান রাজু। তিনি দাতা গ্রহীতার সাথে সমন্বয় করে দেন। জমি দাতাদের জমিটি বিক্রির প্রয়োজন এবং ক্রেতাদেরও জমির প্রয়োজন। এটা কেনা-বেচা এবং দলিল পর্যন্ত আমি জানি। বয়স কম-বেশী এটা আমার জানার বাইরে।
ফেব্রুয়ারিতে কাগজপত্র দেখে ক্রেতা বিক্রেতাদের সাথে দর দাম করে ৪৪ লাখ টাকা ঠিক হয়। মার্চ মাসের ১০ তারিখে দলিল লেখক রিয়াজ মিয়া গিয়ে সাব-রেজিস্টার কামরুল হাসানের সাথে দেন-দরবার করেন।
এর মধ্যে জমির মালিক জিন্নাত আরার মৃত ছেলে আজহারুল ইসলামের ৮ ওয়ারিশের মধ্যে ছেলে সাহেবুল ইসলাম বয়স ১৭ একটু বেশি, ছোট মেয়ে সাদিয়া ইসলাম রিয়া ১৪ বছরের একটু বেশি। জমির ১১ জন দাতার মধ্যে দুজন সাবালক হননি। সাবালক না হলে দলিল রেজিস্ট্রি করা যায় না।
এ ব্যাপারে দলিল লেখক রিয়াজ মিয়া জানান, পার্টি যে কাগজপত্র (এনআইডি বা জন্মসনদ) দেন এবং জমির ২৫ বছরের ইতিহাসসহ আরএস, এসএ, বিআরএস, পরচা, খাজনা পরিশোধের কাগজপত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে রেজিস্ট্রি করার জন্য অফিসে দেই। অফিসে কাগজপত্র যাচাই করে জমি রেজিস্ট্রি করেন। এখানে বয়স কম বা বেশি কি হয়েছে সিটি বিষয় না। পার্টি যে কাগজপত্র দাখিল করেছেন তা যদি ভুয়া বা ভিত্তিহীন হয় তাহলে পার্টি দায়ী।
রেজিস্ট্রি অফিসের প্রধান সহকারী মাহফুজুর রহমান জানান, কম বয়সী কারোই জমির দলিল করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই দলিলে কারও গাফলতিতে জন্ম তারিখ কম-বেশি দেখানো হয়েছে তার অনুসন্ধান কর্তৃপক্ষ অবশ্যই করেন। তবে বয়স কম হলে ওই দাতার জমি দলিল করতে হলে আদালতের আদেশ পত্র বা সাকসেশন প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে সাব-রেজিস্টার কামরুল হাসান বলেন, জমির কাগজপত্র দাতা গ্রহীতাদের সমন্বয়ে হয়। এক্ষেত্রে আমার যাচাই করার সুযোগ নেই। এখতিয়ারের বাইরে, তার পরও বর্ডার লাইনে থাকা কিছু কিছু এনআইডি বা জন্ম সনদ অনলাইনে যাচাই করি। তবে এ ব্যাপারে কোন কাগজ পত্রে ত্রুটি থাকলে দলিল লেখক, শনাক্তকারী ও সাক্ষীরা দোষী সাব্যস্ত হতে পারে। তবে আমি কোনো অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করিনি।
আরএইচ/এমএস