ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

খুলনায় করোনায় মৃত্যু হার বেড়েছে ১৭ গুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক | খুলনা | প্রকাশিত: ১০:১৮ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২১

সচেতনতার অভাব, স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ নানা করণে খুলনায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। চলতি মাসেই মারা গেছেন ১৬ জন। করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই সূচকেই বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলা এগিয়ে আছে। বছরের প্রথম তিন মাস আক্রান্তের হার কম থাকলেও এপ্রিলে এসে তা অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা, টিকা নেয়া এবং সংক্রমণ রোধে দ্রুত নমুনা পরীক্ষার ওপর জোর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সচেতনতামূলক প্রচার বাড়ানো হয়েছে। কেউ আক্রান্ত হলে সেই পরিবারকে ফোন দিয়ে নির্দেশনা দেয় হচ্ছে। দ্রুত পরীক্ষা করে ফলাফল জানার জন্য সম্প্রতি ১০ হাজার অ্যান্টিজেন কিট আনা হয়েছে। আগে শুধু খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা পরীক্ষা হতো। এখন জেলা সদর হাসপাতালে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে সংক্রমণ দ্রুত শনাক্ত করে ছড়িয়ে পড়া কিছুটা হলেও রোধ করা যাবে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা জেলায় করোনার সংক্রমণ শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সবশেষ ৪৮ ঘণ্টায় জেলায় শনাক্তের এ হার ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যায় ওপরের দিকের অন্য চার জেলার মধ্যে যশোরে ৪৮ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ, কুষ্টিয়ায় এ হার ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, ঝিনাইদহে ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং চুয়াডাঙ্গায় শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।

ওই সূত্রে আরও জানা যায়, ১৩ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৭ দিনে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একহাজার ১১৩ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৮৬ জনই শনাক্ত হয়েছেন খুলনা জেলায়। বাকি ৯ জেলা মিলে শনাক্ত হয়েছেন ৭২৭ জন। খুলনা জেলায় গত এক সপ্তাহে দিনে গড়ে ৫৫ জনের বেশি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। বিভাগের অন্য জেলাগুলোয় এ সংখ্যা অবশ্য কম। খুলনা জেলায় এখন কোভিড-১৯ আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৮ হাজার ৫১৫ হলেও রোগীর সংখ্যায় বিভাগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জেলা যশোরে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৮৮৪।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, খুলনা জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩২ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৪৮৬ জন। এদিকে জেলায় মোট আক্রান্ত রোগীর মধ্যে খুলনা নগরেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৮৩৭। অর্থাৎ জেলার প্রায় ৮১ শতাংশ রোগীই খুলনা নগরের। খুলনা নগরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১০৪ জন। অন্যদিকে অন্যান্য উপজেলার মধ্যে রূপসায় এ পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩০৭ জন, ফুলতলায় ২৮৩, ডুমুরিয়ায় ২২৬, পাইকগাছায় ২০০, দাকোপে ২০১, দিঘলিয়ায় ১৬২, তেরখাদায় ১০৬, বটিয়াঘাটায় ১১১ ও কয়রায় ৮২ জন।

১৫ এপ্রিল জেলায় একদিনে সর্বোচ্চ ৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর আগে ১০ এপ্রিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৪ জনের শনাক্ত হয়। এখনো ৮৯৭ করোনা রোগী বাড়িতে ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত বছরের ১৩ এপ্রিল খুলনার ছোট বয়রার করিম নগরে জেলার প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ—এই তিন মাসে ৫১৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন। বছরের প্রথম তিন মাসে প্রতিদিন গড়ে পাঁচজনের কিছু বেশি করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। অথচ চলতি মাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। চলতি মাসের ১৯ দিনেই ৮৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং এ সময়ে মারা গেছেন ১৪ জন। মৃত্যুর হার বেড়েছে প্রায় ১৭ গুণ।

খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সোমবার রাত পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে ৪৩ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে আটজন রয়েছেন আইসিইউতে।

এ ছাড়া করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা খুলনা জেলায় মানুষের সচেতনতা এখনো কম। কঠোর লকডাউনের প্রথম পাঁচদিনে খুলনায় অভিযান পরিচালনা করে ২৬২টি মামলায় একলাখ ২৩ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে। লকডাউন শুরুর আগে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি একদমই মানেনি। কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় কিছুদিন পর সুফল আসতে পারে। এ মুহূর্তে মানুষকে আরও সচেতন হওয়া জরুরি।

আলমগীর হান্নান/আরএইচ/এমকেএইচ