লকডাউনে সাংবাদিক পরিচয়ে সড়কে ঘুরছে একশ্রেণির প্রতারক
করোনা সংক্রমণ রোধে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। প্রয়োজনে যারা বের হবেন তাদের নিতে হবে পুলিশের কাছ থেকে ‘মুভমেন্ট পাস’। তবে গণমাধ্যমকর্মীসহ কয়েকটি পেশার মানুষকে এই পাস নিতে হবে না।
মানিকগঞ্জে এই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে একশ্রেণির প্রতারক। তারা গাড়িতে প্রেস লেখা স্টিকার লাগিয়ে এবং বিভিন্ন নামসর্বস্ব অনলাইন পোর্টাল অথবা পত্রিকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করছে। গাড়িতে সাংবাদিক অথবা প্রেস লেখা দেখে বেশিরভাগ সময়ই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ছেড়ে দিচ্ছে।
রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে লকডাউন পরিস্থিতি তদারকি করার সময়ও এরকম কয়েকটি যানবাহনের দেখা পান। প্রেস লেখা একটি প্রাইভেটকার থামিয়ে তিনি দেখেন গাড়ির ভেতরে দুই নারী এবং ছোট্ট বাচ্চা রয়েছে।
চালক জানান, বাচ্চার জন্য ওষুধ আনতে গিয়েছিলেন তারা। গাড়ির সামনে প্রেস লেখা স্টিকারের বিষয়ে জানাতে চাইলে তিনি একটি নামসর্বস্ব ম্যাগাজিনের উপদেষ্টার ভিজিটিং কার্ড বের করে দেখান। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাকে প্রেস লেখা স্টিকার তুলে ফেলতে বললে তিনি তা সরিয়ে ফেলেন।
একই জায়গায় পুলিশের কাছে ধরা পড়েন এক মোটরসাইকেল চালক। গলায় ঝোলানো ছিল রেজিস্ট্রেশনবিহীন অপরিচিত একটি অনলাইন পত্রিকার কার্ড। পুলিশ তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য সেখানে উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিককে ডাকেন। তারাও ওই অনলাইন পত্রিকার বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি। পরে জেরার মুখে মোটরসাইকেল চালক নিজেকে ইন্স্যুরেন্সকর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। কার্ডটি তার এক আত্মীয় বানিয়ে দিয়েছেন বলে জানান।
রোববার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বরংগাইল বাসস্ট্যান্ডে দায়িত্ব পালন করেন শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা। তিনি জানান, সকালে নামসর্বস্ব একটি পত্রিকার স্টিকার লাগিয়ে আরোহীসহ তিন ব্যক্তি মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। তাদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যায় মোটরসাইকেলটি ভাড়ায় যাত্রী টানছিল। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেন তিনি।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তী জানান, লকডাউনে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ প্রশাসন ‘মুভমেন্ট পাসের’ আওতামুক্ত রেখেছে। এই সুযোগে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় একশ্রেণির প্রতারক নামসর্বস্ব পত্রিকা বা অনলাইনের কার্ড ও স্টিকার ব্যবহার করে অবাধে চলাচল করছে। সহকর্মীরা অনেকেই তাদের নাম দিয়েছে ‘লকডাউন সাংবাদিক’।
লকডাউন উপলক্ষে সাংবাদিক বনে যাওয়া এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম জানান, চলমান লকডাউনের মধ্যে যারা বাইরে বের হচ্ছেন বিভিন্ন চেকপোস্টে তাদের যাচাই-বাছাই করা হয়। যৌক্তিক কারণ ছাড়া যারা গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। সাংবাদিক নামধারী প্রতারকদের বিরুদ্ধেও একইভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বি এম খোরশেদ/এসজে/জিকেএস