ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বেনাপোল-খুলনা কমিউটার ট্রেনে চোরাচালানি!

প্রকাশিত: ১১:২৫ এএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৫

বেনাপোল-যশোর-খুলনা রুটে চলাচলকারী কমিউটার ট্রেন পরিণত হয়েছে চোরাচালানিদের নিরাপদ রুটে। আর এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ট্রেনের বেশ কিছু অসাধু কর্মচারী ও রেলওয়ে পুলিশ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই রুট দিয়ে নিরাপদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা, কসমেটিকস, ইমিটেশন গহনা, মসলাজাত দ্রব্য, শিশু খাদ্য, সার, কীটনাশক, বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ মারাত্মক অস্ত্র।

চোরাচালান প্রতিহত করতে দায়িত্বে রয়েছে বিজিবি, রয়েছে পুলিশ তারপরেও চলছে অবাধে এসব ব্যবসা। আর এটাই প্রকৃত বাস্তবতা। চোরাচালানে কখনো সহায়তা করছে সীমান্তে টহলরত বিজিবির কিছু অসাধু সদস্য, কখনো উৎসাহিত করছে পুলিশ।

বেনাপোল থেকে যশোর খুলনা বর্তমানে ২টি ট্রেন চলাচল করে। আর এ সুযোগে চোরাচালানিদের পণ্য এত গাদাগাদি করে উঠে যে এখানে সাধারণ যাত্রীদের তিল ধারণের জায়গা থাকে না।

যাত্রীরা যশোর খুলনায় যেতে বাসের চেয়ে ট্রেনের ভাড়া অনেক কম বলে ট্রেনে যেতেই পছন্দ করেন। কিন্তু একবার যদি কোনো সাধারণ যাত্রী এ ট্রেনে উঠেন তা হলে তিনি আর দ্বিতীয় বার চোরাচালানিদের সিট দখল করে চোরাই পণ্য রাখা ট্রেনে করে দাঁড়িয়ে যশোর খুলনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এসব চোরাচালানিদের ট্রেনের টিকিটও কাটতে হয় না।

বেনাপোল চেকপোস্ট সীমান্ত পার হলে ঢাকা-বেনাপোল সড়কের আমড়াখালি নামক স্থানে বিজিবি চেকপোস্ট, বেনাপোল বন্দর থানা, কায়বা বিজিবি ক্যাম্প, গোড়পাড়া ফাঁড়ি, কাশিপুর বিজিবি ক্যাম্প, নাভারণ হাইওয়ে ফাঁড়ি, শার্শা থানা, ঝিকরগাছা থানা অতিক্রম করে যশোর আসতে হয়। যার কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ এড়িয়ে মাদক ও অস্ত্রের চালান সড়ক পথে পাচার করা অনেক সময় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।

পক্ষান্তরে ট্রেনের চোরাই পণ্য পরিবহন অনেক সহজ লভ্য। বেনাপোল স্টেশনে ট্রেনে অবৈধ পণ্য তোলাটাই শুধু সমস্যা। একবার এসব পণ্য ট্রেনে তোলা হলে বেনাপোল থেকে যশোর, খুলনা আর কোথাও বাধা নেই, নেই কোথাও ট্রেন পুলিশ, বিজিবির তল্লাশি।

ট্রেনের মধ্যে দায়িত্বে নিয়োজিত রেলওয়ে পুলিশ নির্দিষ্টহারে টাকা পেয়ে এ সমস্ত পণ্য কারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তা নিয়ে কোনো কথা বলতে চায় না। যার কারণে সড়ক রুটের চেয়ে বেনাপোল-যশোর-খুলনা রুট কমিউটার ট্রেন চোরাচালানিদের জন্য অনেক নিরাপদ। মাদক ও অস্ত্র পাচারের জন্য এসব চোরাচালানি সিন্ডিকেট বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। নিরাপদ রুট পেয়ে এ রুট দিয়ে অস্ত্র ও মাদকসহ অবৈধ পণ্য পাচার হয়ে থাকে।

চোরাচালানের প্রধান রুট হিসেবে চোরাচালানিরা দীর্ঘদিন ধরে সড়ক পথ ব্যবহার করে আসলেও ইদানিং মাদক ও অস্ত্র পাচারের নতুন নিরাপদ রুট হিসেবে গড়ে উঠেছে বেনাপোল-যশোর-খুলনা রুটে চলাচলকারী কমিউটার ট্রেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেনাপোল রেলস্টেশন এলাকায় পোর্ট থানা পুলিশ এবং বিজিবি দাঁড়িয়ে থাকে যাতে ট্রেনে কোনো চোরাই পণ্য না উঠে। চোরাচালানিরা অনেক সময় বেনাপোল রেলস্টেশন থেকে চোরাই পণ্য তুলতে না পেরে কয়েক কিলোমিটার দূরে দিঘিরপাড়, কাগজপুকুর, নাভারন এলাকা থেকে ট্রেন থামিয়ে চোরাচালানি পণ্য ট্রেনে উঠান। এসময় ট্রেনে থাকা দায়িত্বে রেল পুলিশ সদস্যদের চোরাই পণ্য উঠাতে চোরাকারবারিদের সহযোগিতা করতে দেখা যায়।

যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানা ও শার্শা উপজেলা দীর্ঘদিন ধরে মাদক জোন হিসেবে পরিচিত। এই দুই থানার সীমান্ত জুড়ে রয়েছে অনেকগুলো সীমান্ত ঘাট। এর মধ্যে কায়বা, গোগা, পাঁচ ভূলোট, অগ্রভূলোট, পুটখালি, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, বড় আঁচড়া, সাদীপুর, ধান্যখোলা, ঘিবা, শিকারপুর, কাশিপুর দিয়ে বেশি চোরাচালানি হয়ে থাকে। এসব ঘাট দিয়ে প্রতিনিয়ত ভারত থেকে পাচার হয়ে আসে শাড়ি, থ্রিপিস, থান কাপড়, ইলেক্ট্রিক সরঞ্জাম, শিশুখাদ্য, ইমিটেশন জুয়েলারি, ওষুধ, মাদকসহ বিভিন্ন মারাত্মক অস্ত্র এবং পাচার হয়ে যাচ্ছে নারী-পুরুষ, শিশু, গ্যাস, সয়াবিন, পেট্রল, পিতল, সোনাসহ দেশের মূল্যবান সম্পদ।

মাঝে মধ্যে ঝটিকা অভিযানে বিজিবি কিছু সংখ্যক ভারতীয় অবৈধ পণ্য আটক করলেও বড় বড় চোরাচালান থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ফলে দেশীয় পণ্যের বাজার নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ, নেশায় আশক্ত হয়ে পড়ছে ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা।

এ ব্যাপারে বেনাপোল রেলওয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে জানান, আমরা যদি পথে ট্রেন থামিয়ে মাল না উঠাই তাহলে চোরাচালানিরা ট্রেন লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে থাকে।

মো. জামাল হোসেন/এমজেড/এমএস