ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

শারীরিক সম্পর্কের কথায় ডেকে নিয়ে যুবদল নেতাকে খুন

জেলা প্রতিনিধি | পাবনা | প্রকাশিত: ০৪:৩৬ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২১

পাবনা জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী (৪০) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের একজন ইব্রাহীমকে (২৮) গ্রেফতারের পর পুরো রহস্য জানতে পারে পিবিআই।

গ্রেফতার ইব্রাহিম পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার ডেঙ্গারগ্রামের তায়েজ প্রাংয়ের ছেলে। পিবিআই মঙ্গলবার(১৩ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য নিশ্চিত করে।

পরকীয়া এবং আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে এক নারী (নিহতের প্রেমিকা) এ হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেন বলে চানায় পিবিআই। শারীরিক সম্পর্কের প্রলোভন দেখিয়ে পরকীয়া প্রেমিকা অন্যদের সহযোগিতায় তাকে খুন করে লাশ গুম করেন। পিবিআই জানিয়েছে, মামলাটি হাতে পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ করা হলো।

পিবিআই জানায়, গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাবনা পৌরসদরে নিজের ফটোস্ট্যাট দোকান থেকে কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে যান যুবদল নেতা শাজাহান আলী। তারপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তার কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার। পরদিন ১ এপ্রিল এ ঘটনায় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার স্বজনরা। নিখোঁজের পাঁচদিন পর ৫ এপ্রিল বিকেলে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় তার তার গলিত মরদেহ পাওয়া যায়। উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসার কাছে জনৈক কাসেমের বসতবাড়ির একটি টয়লেটের হাউজ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরিবারের লোকজন শাহজাহানের মৃতদেহ শনাক্ত করেন।

এ ব্যাপারে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে শাহজাহানের ভাই আব্দুল গফুর পাবনা সদর থানায় ৭ এপ্রিল একটি হত্যা মামলা (নম্বর ১৫) দায়ের করেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলাটি পিবিআইতে গত ১০ এপ্রিল স্থানান্তর করা হয়। ১১ এপ্রিল ভোর ৬টার দিকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ইব্রাহীম প্রাংকে গ্রেফতার করা হয়।

jagonews24

পিবিআই জানায়, পাবনা শহরের একজন বিবাহিত নারীর সঙ্গে শাহজাহানের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই নারীর সঙ্গে তার অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক সময়ে ওই নারী শাহজাহানকে টাকা পয়সা দেন। যা দিয়ে তিনি পাবনা শহরে একটি ফটোস্ট্যাটের দোকান দেন। এরপর তাদের অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি ওই নারীর স্বামী টের পান। পরে ওই নারী সম্পর্কটি ভেঙে দেন। তিনি শাহজাহানের কাছে টাকাও ফেরত চান। কিন্তু শাহজাহান সম্পর্কটি ভাঙতে রাজি হননি, টাকাও ফেরত দিতে চাননি। এরপরই ওই নারী তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এতে তার কয়েক নিকটাত্মীয় সহযোগিতা করেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সবুজ বলেন, মামলাটির তদন্তের স্বার্থেই ওই নারীর নাম তারা প্রকাশ করছেন না।

তিনি আরও জানান, পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই নারী শাহজাহানকে শারীরিক সম্পর্কের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে দোকান থেকে ডেকে নেন। তাকে আটঘরিয়ার উপজেলার গঙ্গারামপুরে ইব্রাহীম প্রাংয়ের (গ্রেফতারকৃত) নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই বাড়িতে নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শাহজাহানকে খাওয়ানো হয়। এতে তিনি অচেতন হয়ে যান। এরপর ওই নারী, ইব্রাহীমসহ অন্যরা মিলে তার হাত-পা বেঁধে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। এরপর তারা লাশ গুম করেন। লাশ বস্তাবন্দি করে গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসার কাছে জনৈক কাসেমের বসতবাড়ির টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকের ভেতরে ফেলে দেন। ওপরে খড়কুটো দিয়ে ঢেকে রাখেন। এরপর ঘটনার সঙ্গে জড়িত ইব্রাহীম প্রাং ও অন্য কয়েক আসামি পাবনার বাইরে পালিয়ে থাকেন। গত ৫ এপ্রিল ওই বাড়ির টয়লেটের হাউজ থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে সবার সন্দেহ হয়। স্থানীয়রা একটি মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানান।

গ্রেফতার আসামি ইব্রাহীম প্রাংকে সোমবার ( ১২ এপ্রিল) পাবনার আদালতে সোপর্দ করা হয়। তিনি আদালতে ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি অন্যান্য আসামিদের নাম-পরিচয়ও প্রকাশ করেছেন।

পিবিআই পাবনা জেলা প্রধান পুলিশ সুপার মো. ফজলে এলাহী জানান, চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটি হাতে পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা রহস্য উদঘাটন ও একজন আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যরা পলাতক আছেন। তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, নিহত শাহজাহান আলী পাবনা শহরের শালগাড়ীয়া এলাকার তোফাজ্জল হোসেন ছেলে এবং নয়ন ফটোস্ট্যাটের মালিক। তিনি পাবনা জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও অবিবাহিত ছিলেন।

আমিন ইসলাম/এসআর/এএসএম