উপজেলা চেয়ারম্যানের ওপর হামলা : আহত অর্ধশতাধিক
সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান, বিএনপি নেতা সুহেল চৌধুরীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
বৃৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় উপজেলা পরিষদের হল রুমে ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ-নূরউদ্দিন অনুসারীরা হামলায় চেয়ারম্যান মাথা ফাটিয়ে দেয়। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান দুইজনই জেলা বিএনপির সদস্য বলে জানা গেছে।
এর জের ধরে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা সদরে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এক ইউপি চেয়ারম্যান গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। প্রথম দফা সংঘর্ষে অনন্ত ৩০ জন আহত হন। দ্বিতীয় দফায় আহত হন আরো ২৫ জন। পুলিশ সংঘর্ষ থামাতে ১১ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে।
দফায় দফায় সংঘষের পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপজেলা পরিষদের অবস্থান নেয়। এ ঘটনায় উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্বনাথ শহরে র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। হামলা ও সংর্ষের ঘটনায় উপজেলা সদরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে কোনো সময় দুই পক্ষ বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরিষদের সদস্যদের মধ্যে এলাকার উন্নয়ন বন্টন নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বক্তব্য দিলে তাতে আপত্তি করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সদস্য আহমদ-নূর উদ্দিন। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
এ সময় হঠাৎ কয়েকজন যুবক পরিষদের হল রুমে প্রবেশ করে দেশিয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় উপজেলা চেয়ারম্যানের উপর। এতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী ও অলংকারী ইউপি চেয়ারম্যান লিলু মিয়াসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, বিকলে ৪টায় উপজেলা চেয়ারম্যানের উপর হামলার প্রতিবাদে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করা হয় উপজেলা শহরে। মিছিলে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি উপজেলা পরিষদের সামন থেকে শুরু হয়ে নতুনবাজারস্থ গোলচত্ত্বরে এসে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জানাইয়া গ্রামবাসীকে নিয়ে কটূক্তিমূলক বিভিন্ন স্লোগান দেন চেয়ারম্যানের অনুসারীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন জানাইয়া গ্রামবাসী। ফলে সভা শেষে মিছিলটি পুরানবাজারের দিকে বাসিয়া সেতুর দক্ষিণ পাড়ে চলে গেলে পিছন দিক থেকে মিছিলটিকে ধাওয়া করেন জানাইয়া গ্রামবাসী। এ সময় ভাইস চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়ে জানাইয়া গ্রামবাসী ও চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়ে এলাকাবাসী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে সরে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে প্রায় আধাঘন্টা সময় ধরে সংঘর্ষ চলে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে ইট পাটকেলের আঘাতে উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শর্টগানের ১১ রাউন্ড গুলি ছুড়ে।
এরপর বিকেল পৌনে ৫টায় উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী ও ভাইস-চেয়ারম্যান আহমদ নূর উদ্দিন পক্ষের লোকজনের মধ্যে আবারো ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অনন্ত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পক্ষের নিজামউদ্দিন গুলিবিদ্ধ অন্তত ১০জন আহত হন।
ভাইস-চেয়ারম্যান পক্ষের আহতরা হলেন, শাহিন, ওয়াসিম, জুনাই, জুনাব আলী, রুবেল, সাজন, জিতু, লিটন, সমর। তাৎক্ষণিকভাবে অন্যদের নাম জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, পরিষদের সভা চলাকালে পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান আহমদ নূরউদ্দিনের ইন্ধনে কয়েকজন সন্ত্রাসী অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
ভাইস-চেয়ারম্যান আহমদ নূরউদ্দিন বলেন, উপজেলার কোনো প্রকল্প আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানদের দেয়া হয়না। সকল প্রকল্প উপজেলা চেয়ারম্যান আতসাৎ করেন। পরিষদের সভায় আমরা প্রতিবাদ জানাই। এতে চেয়ারম্যানের অনুসারীদের মধ্যে হটগুল শুরু হয়। তবে চেয়ারম্যানের ওপর হামলার বিষয়টি জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আসাদুল হক বলেন, এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্বনাথ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ১১ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ওই এলাকা শান্ত রয়েছে।
ছামির মাহমুদ/এআরএ/পিআর