ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

এলাকাবাসীর অভিযোগ ‘খাল কেটে কুমির আনলেন’

জেলা প্রতিনিধি | বরগুনা | প্রকাশিত: ১০:১৩ এএম, ০৬ এপ্রিল ২০২১

বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের আমতলা খাল খনন না করেই বাঁধ কেটে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশনাল অফিসার (এসও) মো. আমিনুল ইসলামের যোগসাজসে ঠিকাদার তিনটি বাঁধ কেটে দিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বাঁধ কেটে ভেকু মেশিন নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা ঠিকাদারের তিনটি ভেকু মেশিন আটকে দেন। পরে খাল খননের অনিয়মের সাথে জড়িতদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবিতে সোমবার (০৫ মার্চ) দুপুরে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের আমতলা খালে ৭শ মিটার খননের জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে দরপত্র আহ্বান করে। ১৭ লাখ টাকার ওই কাজ পায় পটুয়াখালী মেসার্স আজাদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। খাল খনন কাজ পেয়েই ঠিকাদারের লোকজন খালে সেচ দেন। সেচ দিয়ে প্রায় একমাস খাল শুকানোর জন্য রেখে দেন।

গত ২০ মার্চ তিনটি ভেকু মেশিন দিয়ে ওই খাল খনন কাজ শুরু করেন। খনন কাজ শুরু করার আগে ঠিকাদারের লোকজন ওই খালের দুইপাড়ে অন্তত এক হাজার ৫শ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলেছে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এদিকে খাল খনন করতে গিয়ে ঠিকাদারের লোকজন খালের পাড়ে বসবাসরত কাসেম গাজী, আলাউদ্দিন, রশিদ আকন, সোবাহান মোল্লা, ইসমাইল মোল্লা, দুলাল আকন, কাসেম মোল্লা, বেলাল হাওলাদার, হাসেম হাওলাদার ও নুর আলম কবিরাজের বাড়িও কেটে ফেলে। এতে তাদের অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

অপরদিকে দরপত্রে উল্লেখ আছে ওই খানের গভীরতা প্রকার ভেদে ১ থেকে ৩ ফুট, তলা ৬০ ফুট এবং প্রস্থ ৮০ ফুট। কিন্তু ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ নামে মাত্র খাল খনন করে মাটি যত্রতত্র ফেলে রেখেছেন। ৭শ মিটার দৈর্ঘ্য খালের প্রথম ভাগে অন্তত দুইশ পঞ্চাশ মিটার এবং শেষ ভাগে অন্তত দেড়শ মিটার বাকি রেখে মাঝের ৩শ মিটার খাল খনন করেছেন।

পুরো খাল খনন না করেই সমুদয় বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করতে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশনাল অফিসার (এসও) মো. আমিনুল ইসলামের যোগসাজসে ঠিকাদারের লোকজন ওই খালের তিনটি বাঁধ কেটে দিয়েছেন। ঠিকাদারের ভেকু চালক মো. সোহান চৌধুরী সোমবার সকালে বাঁধ তিনটি কেটে দেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এ সময় স্থানীয় লোকজন বাঁধ কাটতে নিষেধ করলে ভেকু মেশিন চালক সোহান তাদের ভয়ভীতি দেখান এবং জীবননাশের হুমকি দেন। বাঁধ কেটে দেয়ায় খাল পানিতে তলিয়ে গেছে। বাঁধ কাটার ঘণ্টাখানেক পরে ঠিকাদারের লোকজন ভেকু মেশিন নিয়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে।

jagonews24

এ সময় স্থানীয় জনতা ঠিকদারের লোকজন ও তিনটি ভেকু মেশিন আটকে দেয়। ওই দিন দুপুরে ভুক্তভোগীরা ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ, তার সহযোগী এসও মো. আমিনুল ইসলাম এবং এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি এবং ক্ষতিপূরণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। খবর পেয়ে গাজীপুর ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খাল খননের জন্য ৭শ মিটার খালে তিনটি বাঁধ দেয়া হয়েছিল। ওই বাঁধ তিনটি কাটা। বাঁধ দিয়ে খননকৃত খালে দেদারসে পানি প্রবেশ করছে। ওই খাল এখন পানিতে টয়টম্বুর।

ওই খালপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত কাসেম গাজী, আলাউদ্দিন ও রশিদ আকন বলেন, খাল কেটে কুমির আনলাম। খাল কাটাতো হলোই না, উল্টো আমাদের বাড়িঘর ভেঙে এবং গাছপালা কেটে তছনছ করে দিয়েছে ঠিকাদারের লোকজন। আমরা এ ঘটনার শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

jagonews24

ঠিকাদারের ভেকুচালক মো. সোহান চৌধুরী স্থানীয় লোকজনকে জীবননাশের হুমকি দেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, খননকৃত খাল লেভেল করতে গিয়ে বাঁধ কেটে গেছে। আমাকে যেভাবে বলা হয়েছে আমি সেটাই করেছি।

ঠিকাদারের তত্ত্বাবধায়ক মো. মহসিন হাওলাদার খাল খননে অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, খাল খননের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশনাল অফিসার (এসও) মো. আমিনুল ইসলাম সোহাগ সবই জানেন। তাকে জানিয়েই নিয়ম-অনিয়ম যাই হোক করেছি।

ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কাজের নিয়ম ও অনিয়মের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার লাইসেন্স দিয়ে স্বপন মৃধা কাজ করেন। ওই বিষয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশনাল অফিসার (এসও) মো. আমিনুল ইসলাম সোহাগ ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, যথা নিয়মেই খাল খনন করা হয়েছে। খননকৃত খাল লেভেল করতে গিয়ে বাঁধ কেটে গেছে বলে আমি শুনেছি। ফলে খননকৃত খাল পানিতে ভরে গেছে।

তিনি আরো বলেন, বাঁধ কেটে দেয়ার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।

বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী কায়েসার আলম বলেন, খাল খননে অনিয়মের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসও আমিনুল ইসলাম সোহাগকে পাঠিয়েছি। পুরো খাল খনন না করা পর্যন্ত কোনো বিল দেয়া হবে না।

আমতলী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এফএ/জিকেএস