চিত্রার ধারে ব্যতিক্রর্মী পাঠশালা
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার বলিদাপাড়া গ্রামে চিত্রানদীর ধারে ২০০৩ সালে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার নামও দেওয়া হয়েছে সুনিকেতন পাঠশালা।
শিক্ষার সাথে আনন্দ নেই। সন্তানেরা পাঠ্য বই মুখস্থ করে খাতায় গিয়ে উদগীরণ করছে মাত্র। শিক্ষা প্রসঙ্গে এটা আমাদের অনেকদিনের অভিযোগ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এমন অভিযোগ করেছেন। তিনি তার শান্তি নিকেতনের প্রকৃতির নিবিড়তায় ও আনন্দের মিলন ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের মনের বিকাশে ব্রতী হয়েছিলেন।
রবি ঠাকুরের সেই পাঠশালার বিষয়টি লক্ষ্য করেই। না বুঝে মুখস্থ করা বিদ্যা কাজে লাগে না। আর আনন্দবিহীন শিক্ষা শিক্ষাই না। কথা দুটি মনে রেখে জাপানি নারী সাইকো হিবিনো ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় জাপান ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের অর্থায়নে চলা এ পাঠশালায় শিশুরা শিখছে আনন্দের সঙ্গে খেলতে। এ কারণেই কেউ ঝড়ে পড়ছে না। ফলে পাঠশালাটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
পাঠশালার প্রধান শিক্ষিকা আলহাজ রোকেয়া খাতুন জানান, তিনি দেখতে দেখতে পাঠশালাটি ১২ বছর পার করেছেন। ২০০৩ সালে এই বিদ্যালয়টি নির্মাণে এগিয়ে আসেন জাপানি নারী সাইকো হিবিনো। তার ৩০ বছরের জমানো টাকা দিয়ে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তার সঙ্গে কোকোরোনো ভিটামিন ইনস্টিটিউট নামের জাপানি সংগঠন হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে ৪ তলা স্কুল ভবন নির্মাণ করে দিয়েছে। এই পাঠশালায় প্লে গ্রুপ থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২২০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।
শিল্পী এস এম সুলতানের চিত্রানদীর পাড়ের প্রাকৃতিক ছন্দময় পরিবেশে ৪ তলা ভবনের সুসজ্জিত কক্ষে পাঠশালার কার্যক্রম চলছে।
শিক্ষার্থীদের পাঠদানকে আধুনিক ও আনন্দময় করার জন্য পাঠশালায় রয়েছে কম্পিউটার, ডিজিটাল ক্লাসরুম। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলার জন্য রয়েছে নানা ধরনের শিক্ষামূলক সিডি। রয়েছে কয়েক হাজার বই সমৃদ্ধ নিজস্ব পাঠাগার।
শিশুদের ক্ষুদে বিজ্ঞানী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে রয়েছে আধুনিক বিজ্ঞানাগার, টেলিস্কোপ, অনুবীক্ষণ যন্ত্র এবং ওজন মাপার যন্ত্র।
ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে দেশি বিদেশি খেলার সামগ্রী। শ্রেণিকক্ষের নির্দিষ্ট সীমার বাইরে খোলা মাঠে খেলার মতো মনোরম পরিবেশ রয়েছে এ পাঠশালায়। শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর শিক্ষাসফর, স্বপ্ন তৈরি, দেয়ালে ছবি একে প্রদর্শন করে।
প্রধান শিক্ষিকা আরো জানান, পাঠশালার শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন মানসম্মত লেখাপড়ার পাশাপাশি বিনামুল্যে স্বাস্থ্যসম্মত টিফিন দেওয়া হয়। মেনুতে থাকে ডিম, মধু, খিচুড়ি, রুটি ইত্যাদি। পাঠশালায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের নিয়ে প্রতিমাসে সভা করা হয় তাদের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ভিটামিন খাওয়ানো, উচ্চতা ও ওজন মাপা হয়। সেই সঙ্গে অভিজ্ঞ চিকিৎসক এনে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান মিটন জানান, শুরুতে পাঠশালাটি স্থানীয় সুধীজন ও স্বেচ্ছাসেবীদের আগ্রহে স্থাপিত হয়। পাঠশালার শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সামাজিক সাংস্কৃতিক উন্নয়নমূলক, জৈব-কৃষিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। ধুমপান ও মাদকবিরোধী র্যালি ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দিবসে অংশগ্রহণ করে। বিদ্যালয়ের জন্য রয়েছে একটি ক্যান্টিন ও ডরমেটরি। এখান থেকে যা আয় হয় তা শিক্ষার্থীদের কাজে ব্যবহার করা হয়।
তিনি আরো জানান, এই পাঠশালাটি একটি মডেল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সম্ভাব্য সব কিছু করা হবে। তবে এর জন্য সমাজের সকলকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে সুনিকেতন পাঠশালার আদলে দেশের বিভিন্নস্থানে এরকম আরও মানসম্মত পাঠশালা গড়ে তোলা হলে শিক্ষায় ঝড়ে পড়ার হার কমবে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে দেশে শিক্ষিতের হার।
এমএএস/পিআর