ফেনীতে নিবন্ধন করেও টিকা নেননি ১১ হাজার মানুষ
রেজিস্ট্রেশন করেও করোনাভাইরাসের টিকা নিতে বুথে আসেননি ফেনীর ১০ হাজার ৯০৯ জন। সচেতনতার অভাব, খামখেয়ালীপনা, গুজব ও প্রচারণার অভাবেই এমনটি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ফেনীতে করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করতে সুরক্ষা অ্যাপস ও বুথে গিয়ে নিবন্ধন করেছেন ৫৯ হাজার ৮১০ জন। এদের মধ্যে টিকা গ্রহণ করেছেন ৪৮ হাজার ৯০১ জন। বাকি ১০ হাজার ৯০৯ জন টিকা নিতে আসেননি। টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে ৩০ হাজার ৭২০জন পুরুষ এবং ১৮ হাজার ১৮১ জন নারী। টিকা গ্রহণের পর জেলায় ২৬ জনের মধ্যে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল।
স্বাস্থ্য বিভাগ আরও জানায়, চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টিকা গ্রহণের নিবন্ধন শুরু হয়। ফেনীতে টিকা প্রদান ও নিবন্ধনের জন্য ১৯টি বুথ স্থাপন করা হয়েছিল। এরমধ্যে ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আটটি, পাঁচটি উপজেলায় দুটি করে ১০টি ও ফেনী পুলিশ লাইনে একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছিল।
টিকাদান কার্যক্রমের জন্য ৩৫ জন চিকিৎসক এবং ছয়জন করে ২৪টি দলে মোট ১৪৪ জন টিকাদানকারীকে নিয়োজিত করা হয়েছিল। প্রথম দিকে টিকা গ্রহণে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ দেখা গেলেও দিনদিন সেই আগ্রহ কমে গেছে।
সুরক্ষা অ্যাপসে নিবন্ধন করে মেসেজ পাওয়ার পরও টিকা না নেয়া নুরুল আলম নামের এক যুবক জানান, শুরুতেই তিনি নিবন্ধন করেছেন। তার মোবাইলে মেসেজ আসার পর পরিবারের সবাই একসঙ্গে ভ্যাকসিন নেবেন বলে তিনি একা ভ্যাকসিন নেননি। পরবর্তীতে করোনার সংক্রমণ কমতে থাকায় তার আর ভ্যাকসিন নেয়া হয়নি।
নিবন্ধন করেও টিকা না নেয়া আবদুল কাইয়ুম জানান, যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা পুনরায় করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তাহলে ভ্যাকসিন নেয়া আর না নেয়া একই কথা। তাই তিনি ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রিপন নাথ জানান, সচেতনতার অভাব, খামখেয়ালীপনা, গুজব ও প্রচারণার অভাবেই ভ্যাকসিন গ্রহণ করা থেকে সাধারণ মানুষ বিরত রয়েছে। এ ছাড়া দিনমজুর থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষ নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে জটিল মনে করে টিকা নিচ্ছে না।
এর জন্য আরও বেশি সচেতনতা ও প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে ফেনীর ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন এসএস মাসুদ রানা বলেন, ‘শুরুর দিকে ব্যাপকভাবে ফেনীতে নিবন্ধন ও করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ প্রক্রিয়াটি উৎসবে পরিণত হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। নিবন্ধন ও ভ্যাকসিন সেন্টারে আবেদনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কিছু কিছু বুথও তুলে নেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিকা গ্রহণ করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে। জেলা তথ্য অফিস ও ফেনী পৌরসভাকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভ্যাকসিন কার্যক্রম তদারকি কমিটি, করোনা প্রতিরোধ কমিটি ও জেলা উন্নয়ন-সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে সবাইকে অবহিত করে টিকা গ্রহণে আগ্রহী করতে বলা হয়েছে। ’
এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ফেনীতে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ফেনীতে ১৫ হাজার ৯২৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ৪৬২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২ হাজার ২০৪ জন সুস্থ ও ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের ফেনী থেকে অন্যত্র রেফার করা হয়েছে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আজিজুর রহমান নামের ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মারা যান। তিনি ২১ মার্চ উপসর্গ নিয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। ২২ মার্চ নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে তার পজিটিভ আসে। ২৫ মার্চ তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান।
এসজে/জেআইএম