ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

প্রত্যাবাসন আটকাতে অপরাধ করছে রোহিঙ্গাদের একাংশ

সায়ীদ আলমগীর | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ০৯:৫৩ এএম, ২৫ মার্চ ২০২১

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মারামারি, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত হচ্ছে। এমনকি ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটছে। আর এসব কর্মকাণ্ড ইচ্ছাকৃতভাবে করা হচ্ছে বলে দাবি রোহিঙ্গাদের একটি অংশের। তারা বলছেন, নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া আটকাতেই এসব করা হচ্ছে।

গত সোমবার (২২ মার্চ) উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। ওই অগ্নিকাণ্ডকে পরিকল্পিত বলে দাবি করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাধারণ রোহিঙ্গারা।

অসমর্থিত সেই রোহিঙ্গা সূত্র মতে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রাণ রক্ষায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেন প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালের এ রোহিঙ্গা আগমনের পূর্বে নব্বই দশকের শুরু থেকে নানা কারণে আরও প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ১০ হাজার একর পাহাড়ি জমিতে ৩৪টি ক্যাম্প করে একত্রে বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয় কেন্দ্র গড়া হয়। রোহিঙ্গাদের উপর ঘটা চরম অমানবিক এ ঘটনার জন্য সারাবিশ্ব মিয়ানমারকে ধিক্কার দেয়ার পাশাপাশি নানাভাবে সমালোচনা শুরু করে। এরপর থেকে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে তুলে ধরতে চেষ্টা চালিয়ে আসছে মিয়ানমার জান্তারা।

সূত্রের দাবি, মিয়ানমার সামরিক জান্তারা কৌশলে ক্যাম্পে থাকা লোকজনকে হাত করে মারামারি, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করায়। রোহিঙ্গাদের দ্বারা সংগঠিত অপরাধকর্ম নিয়ে মিয়ানমারের অর্থায়নে কিছু গণমাধ্যমকর্মী দ্রুত প্রতিবেদন তৈরি করে প্রচার করে। এসব প্রতিবেদন আবার সংগ্রহ করে মজুদ করছে মিয়ানমার সেনারা।

rohinga-fire

ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশুদের মারামারি। ফাইল ছবি। 

সূত্রটির দাবি, রোহিঙ্গা নির্যাতন ও তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার দাবি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার করা মামলায় রোহিঙ্গাদের অপরাধী ও উগ্রবাদী হিসেবে প্রমাণের লক্ষে মিয়ানমার অর্থ দিয়ে এসব অপকর্ম করাচ্ছে। আর রোহিঙ্গারা অর্থের লোভে পড়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছে। এসব নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে।

স্থানীয় গ্রামবাসীদের ধারণা, সোমবারের অগ্নিকাণ্ডটি ‘পরিকল্পিত’। এলাকার বাজারে আসা-যাওয়া করা সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ‘আত্মঘাতী’। তবে এসব বিষয় নিয়ে রোহিঙ্গারা বেশি মুখ খুলতে রাজি নন। কারণ, যারা এ ঘটনার নেপথ্যে কাজ করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে তারা ক্যাম্পটিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তাদের ভয়ে সাধারণ রোহিঙ্গারা মুখ খুলতে পারেন না। এসব রোহিঙ্গাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি তারা।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, ‘কিছু রোহিঙ্গারা কেরোসিন দিয়ে নিজেদের ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে শুনেছি। এছাড়া শুনেছি ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা দুই গ্রুপে বিভক্ত। তাদের এক গ্রুপ বিপথগামী, অপর গ্রুপ সাধারণ নিরীহ। অস্ত্রধারী রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরতে নারাজ। তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নস্যাৎ ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চায়।’ এসব রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।

rohinga-fire-2

বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন

সাধারণ রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, সশস্ত্র রোহিঙ্গারা এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যা তারা করতে পারে না। তারা দল বেধে ক্যাম্পে ক্যাম্পে অরাজকতার চেষ্টা করে। ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে এ পর্যন্ত ৬০ জনেরও অধিক রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরটি আমার ইউনিয়নে। তাই ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। সোমবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে আমার কাছে যেসব খবর এসেছে তাতে মনে হচ্ছে ঘটনাটি পরিকল্পিত। সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, কয়েকটি স্থানে আগুন ধরার কারণেই দ্রুত আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই আগুন সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।’

পুড়ে যাওয়া ঘরের ধ্বংসস্তূপে ফেরা রোহিঙ্গাদের অনেকেও চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরীর মতো তথ্য সাংবাদিকদের দেন।

তাদের মতে, ক্যাম্পের একাধিক স্থানে একই সময়ে আকস্মিক আগুন লেগে যায়। সাধারণ অগ্নিকাণ্ড একসঙ্গে একাধিক বাড়িতে ঘটে না। কোন একটি বাড়ি থেকে আগুনের সূত্রপাত হলে এতো ব্যাপক ক্ষতি হতো না। অগ্নিকাণ্ডের সময় ধোঁয়ায় বিস্ফোরকের গন্ধ পাওয়া গেছে বলে দাবি করছেন ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা। তবে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণেও এমনটি ঘটতে পারে বলে মনে করেন কিছু রোহিঙ্গা। সশস্ত্র রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের ভেতরে নানা কেমিক্যাল নিয়েও নানা ধরনের কাজ করে থাকে বলে মন্তব্য তাদের।

rohinga-fire

মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, এটি নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীনকেও তার ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে বলেন, ‘গঠিত তদন্ত কমিটি এসব বিষয় খতিয়ে দেখবে।’

বুধবার (২৪ মার্চ) ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। আগুনে অনেক স্থানীয় পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদেরকেও সহযোগিতার আওতায় আনা হবে। যাতে তারাও দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে। আগুন লাগার পেছনে যদি রোহিঙ্গারাও জড়িত থাকে তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

সায়ীদ আলমগীর/জেডএইচ/এমএস