চেয়ারম্যানের ডাকে সাড়া না দিলে কাজ পান না নারী সদস্যরা
গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাদলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যসহ ৬ ইউপি সদস্য।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) বিকেলে গাইবান্ধা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংরক্ষিত সদস্য শাহানা ইয়াসমিন উল্লেখ করেন, লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাদল নারীলোভী, দুর্নীতিবাজ ও প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎকারী। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার পরিচয়ে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন। আত্মসাৎকৃত অবৈধ টাকা দিয়েই লেঙ্গাবাজারে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
একজন শিক্ষক হয়েও তিনি ছাত্রীকে ধর্ষণকারী। মোস্তাফিজুর রহমান বাদল ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই এক স্কুলছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভণে ধর্ষণ করেন। এ ব্যাপারে মামলা হলে তিনি দু’বার জেলহাজতে থাকেন। পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ধর্ষিতার পরিবারের সাথে আপোষ করে রেহাই পান।
কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে বর্তমানে একটি মামলার (নং ৪৯/৭৬২) আসামি। এ মামলাতেও তিনি হাজত খেটে আদালতের অস্থায়ী জামিনে রয়েছেন।
তার এ অপকর্মগুলো মুখবুঝে সহ্য করলেও নারী সদস্যরা সংশ্লিষ্ট কাজে চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করতে কুণ্ঠাবোধ করেন ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
চেয়ারম্যান নারী সদস্যদের মিটিংয়ের নামে এককভাবে তার কক্ষে ডাকেন। এতে সাড়া না দিলে তিনি ওই সদস্যকে বিভিন্নভাবে হয়রানির চেষ্টা করেন এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ থেকে বঞ্চিত করেন। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে।
এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে এলাকার সাধারণ জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ায় ভয়ে চেয়ারম্যান পরিষদ কার্যালয়ে না এসে নিজ বাসভবনে বসে সকল কাজ সম্পাদন করছেন। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, ইউপি চেয়ারম্যান বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎসহ এলজিএসপি বরাদ্দ থেকে নিজ বাড়িতে সেচ পাম্প স্থাপন করে সুবিধাভোগীদের সুবিধা না দিয়ে চুক্তিভিত্তিক সেচ দিয়ে আসছেন।
এছাড়া নিজের ভাইকে গৃহহীন দেখিয়ে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। সরকারি বিধিমোতাবেক প্রতিটি উন্নয়ন কাজে নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হলেও চেয়ারম্যান বাদল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীর প্রাধান্য দেন না। ফলে তারা অনেক ক্ষেত্রেই প্রকল্পের কাজ হতে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। তিনি টাকার বিনিময়ে গুটিকয়েক ইউপি সদস্যকে নিজ নিয়ন্ত্রণে রেখে তাদের নামে বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ বরাদ্দ দেন।
তার এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দফতরসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করা হলেও অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে তার তদন্ত অদ্যাবধি হচ্ছে না। এসব বিষয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় তাকে স্থানীয় সরকার বিভাগ সাময়িক বরখাস্ত করে। কিন্তু সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে পুনর্বহালের আদেশ পেয়ে তিনি আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মনোয়ারা বেগম ও শাবানা খাতুন, সাধারণ সদস্য হামিদুল ইসলাম হক খোকা ও গোলাম মোস্তফা।
জাহিদ খন্দকার/এফএ/জিকেএস