৯০ দিন টানা জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল উপহার পেল ১২ শিশু
টানা ৯০ দিন জামাতে নামায পড়ে বাইসাইকেল উপহার পেয়েছে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার চালিতাবাড়ী ও পূর্ব জিড়ারকাঠি গ্রামের ১২ শিশু-কিশোর।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) রাতে চালিতাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত মাহফিল শেষে তাদের হাতে বাইসাইকেল তুলে দেন চালিতাবাড়ী-পূর্ব জিড়ারকাঠি সোসাইটি (সিপিজে সোসাইটি) নামে একটি সামাজিক সংগঠন।
এছাড়া উপহার দেয়া হয় ধর্মীয় শিক্ষার বই ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হকের বীরত্বগাঁথা বই।
পুরস্কার প্রাপ্তরা শিশু-কিশোররা হলো, চালিতাবাড়ি গ্রামের মো. ইব্রাহীম, মো. ছিয়াম, মো. ফাহাদ, মো. মমিন, মো. আব্দুল্লাহ, মো. সোহান, মো. কাওছার হাওলাদার, মো. ফারদিন, মো. নেয়ামুল এবং পূর্ব জিড়ারকাঠি গ্রামের মো. রাজু হোসেন, মো. রানা ও মো. কাওছার।
চালিতাবাড়ী-পূর্ব জিড়ারকাঠি সোসাইটির (সিপিজে সোসাইটি) সমন্বয়ক ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজক নিয়াজ মাহমুদ সোহেল বলেন, ‘ঘুড়ি ওড়ানো, লাটিম ঘুড়ানো, হাডুডু এসবের জায়গায় এখন গ্রামের শিশু-কিশোরদের ফেসবুক, টিকটক, পাবজিসহ অনলাইন গেমের প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে। তারা এখন হাতের নাগালেই পাচ্ছে ইন্টারনেট সংবলিত প্রযুক্তি। এগুলো শিশু-কিশোরদের ওপর মানসিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাদের মধ্যে অপরাধে জড়ানোর প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। কেউ কেউ মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। শিশু-কিশোরদের বদ অভ্যাস থেকে ফেরাতে এবং মসজিদমুখি করতে পুরস্কার ঘোষণার প্রস্তাব রাখি। আমার প্রস্তাবে সবাই সমর্থন জানান।’
নিয়াজ মাহমুদ সোহেল বলেন, ‘গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিনে চালিতাবাড়ী ও পূর্ব জিড়ারকাঠি গ্রামের শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দেয়া হয়, একটানা ৯০ দিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করবে, তাদেরকে একটি করে বাইসাইকেল পুরষ্কার দেয়া হবে। সে ঘোষণায় উৎসাহিত হয়ে এলাকার অনেক শিশু-কিশোরই নামাজ আদায় শুরু করে। টানা ৯০ দিন নিয়মিত জামাতে নামাজ পড়েছে এমন ১২ জনের হাতে পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়।’
চালিতাবাড়ী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো. কাওছার হোসেন বলেন, ‘শিশু-কিশোরদেরকে নামাজের প্রতি আকৃষ্ট করে মসজিদমুখি করার জন্য এমন উদ্যোগ এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ঘোষণার পর থেকে অনেক শিশু-কিশোর মসজিদে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা শুরু করে। তারা ঠিকমতো নামাজ আদায় করছে কিনা তা হিসাব রাখার জন্য প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর হাজিরা নেয়া হতো।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতা চলাকালীন সময়ে তারা শুধু নামাজ পড়েনি। বরং সঠিকভাবে নামাজ শিক্ষা ও নামাজ সম্পর্কে জরুরি মাসয়ালাও শেখানো হয়। পাশাপাশি সহি শুদ্ধভাবে কোরআন পড়া শেখানো হয়েছে। সেই সঙ্গে নামাজের প্রতি অন্যদের আহবানের তালিম দেয়া হয়েছে। এলাকার শিশু-কিশোররা নামাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে। এরপর থেকে শিশু-কিশোররা নিয়মিত নামাজে আসছে বলেও জানান তিনি।’
নূর আলম নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘এই উদ্যোগ আমাদের আনন্দিত করেছে। আমাদের শিশুরা মসজিদমুখি হয়েছে। তাদের পাঁচ ওয়াক্ত জামাতে নামাজ আদায়ের অভ্যাস গড়ে উঠেছে। এতে করে বদ অভ্যাস থেকে রক্ষা পাবে। নিঃসন্দেহে এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’
বাইসাইকেল পুরস্কার পাওয়া সিয়াম জানায়, বাইসাইকেল পাওয়ায় আমার মা-বাবা খুব খুশি হয়েছেন, আমারও অনেক ভালো লেগেছে। আমাদের দেখে অনেকে এখন নিয়মিত নামাজ পড়ছেন।’
সাইফ আমীন/আরএইচ/জিকেএস