সিদ্ধিরগঞ্জ থানার প্রায় অর্ধেক মামলা মাদকের
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় গত তিন বছরে যত মামলা হয়েছে তার প্রায় অর্ধেক মাদকের মামলা। পরিসংখ্যান বলছে, এ থানায় ২০১৮ সালে মোট মামলা হয়েছে ৭৮০টি, তার মধ্যে মাদকের মামলা ছিল ৫৯৮টি। ২০১৯ সালে মোট মামলা ৮৯৩টির মধ্যে মাদকের মামলা ৫৬৫টি।
আর গত বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মোট মামলা হয়েছে ৪৮৭টি, তার মধ্যে মাদকের মামলা ছিল ২৩০টি। এছাড়া চলতি বছরের রোববার (২১ মার্চ) পর্যন্ত এ থানায় মামলা হয়েছে মোট ৯২টি। এর মধ্যে মাদক মামলা রয়েছে ৩৩টি।
মাদক মামলা নিয়ে কথা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাদক মামলা বেশি হওয়ার কারণ হলো- পুলিশের তৎপরতা। পুলিশ তৎপর থাকায় বিভিন্ন সময় অভিযান হয়। সেই অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতেই মাদকসহ আসামি গ্রেফতার হয়।’
ওসি মশিউর মনে করেন- নিম্ন আয়ের মানুষ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ‘অল্প পুঁজিতে বেশি লাভের আশায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা এ পেশায় আসে।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সামছুল আলম বলেন, ‘আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করায় মাদক মামলা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ আসামিরাও আইনের আওতায় আসছে। মাদকের সরবরাহ কমাতে আমরা সবাই কাজ করছি।’
উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের কৌতূহল থাকায় মাদকের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা। তিনি যোগ করে বলেন, ‘মাদকের চাহিদা কমাতে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। তাছাড়া এ বিষয়ে পরিবারকেও সচেতন হতে হবে।’
র্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিমউদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘নিয়মিত অভিযান হয়। আসামি গ্রেফতার হয়। কিন্তু মাদকের চাহিদা কমছে না। মাদকের চাহিদা কমাতে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।’
আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ছাড়াও অন্যরাও যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করেন তাহলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
২০১৮ সালে মাদক নিয়ন্ত্রণে যে আইনটি হয়েছে সেটির সঠিক প্রয়াগ হলে মাদক নিয়ন্ত্রণে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, ‘একজন মানুষ যেসব কারণে মাদক নেয়, সে কারণগুলো আগে সঠিকভাবে জানতে হবে; তাহলে মাদকের চাহিদা কমানো সম্ভব।’
একই সঙ্গে দেশের বর্ডার গার্ড যদি দায়িত্বশীল থাকে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এক্ষেত্রে সরব ভূমিকা রাখে তাহলে অনেকখানি মাদক নির্মূল করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ না থাকায় উঠতি বয়সীরা মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ‘সিদ্ধিরগঞ্জ মানব কল্যাণ সংস্থা’র সভাপতি মোহাম্মদ সুমন হোসেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে এলাকায় খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। এলাকার উঠতি বয়সের ছেলেরা খেলার মাঠ না থাকায় মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। আর মাদক নির্মূল করতে হলে সামাজিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সমাজের সব নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।’
এমআরআর/জেআইএম