জল থেকে স্থলে ঠাঁই হলো সেই মিলন নেছার
শরীয়তপুরের খেয়াঘাটের মাঝি মিলন নেছার (৫২) স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হলো। কষ্ট করে একখণ্ড জমি কিনলেও তাতে ঘর নির্মাণ করতে পারেননি তিনি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় জেলা প্রশাসনকে।
শনিবার (২০ মার্চ) নির্মিত এই ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঘরের কাজের উদ্বোধন করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, ‘মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘর ও জমি প্রদানের কার্যক্রম নিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শে মাঝি মিলন নেছাকে একটি ঘর দেয়া হয়েছে’।
এসময় গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক ঢালী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলমগীর হুসাইন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাহমিনা আক্তার চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গোসাইরহাট পৌরসভার কাউন্সিলর আলী আকবর সরদার ও কাউন্সিলর হুমায়ন সিকদার বলেন, ‘মিলন নেছা নৌকা চালিয়ে মানুষ পারাপার করতেন। তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। তাই তিনি ঘর পেলেন’।
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে জয়ন্তী নদীতে নৌকায় মানুষ পারাপার করেন মিলন নেছা। মিলনের যখন বয়স ২২ বছর, তখন তার বাবা মারা যান। বাবার পথ অনুসরণ করে ওই বয়সেই সংসারের হাল ধরতে মাঝির কাজ শুরু করেন তিনি।
প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকা আয় করেন। তাছাড়া দুই পারের কিছু মানুষ বছরে যা ফসল পান তার একটি অংশ দিয়ে সহযোগিতা করেন মিলনকে।
নৌকাতেই রান্না-খাওয়া, নৌকাতেই বসবাস তার। নৌকা পারাপার করে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছেন। সেই সঞ্চয় দিয়ে ছয় শতক জমি কিনেন তিনি। কিন্তু ঘর তুলতে পারেননি।
তার স্বামী রহম আলী সরদার ১৫ বছর আগে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। নদীর পাড়ে ছাউনি নৌকায় ছোট ছেলে আব্দুল মালেককে (২২) নিয়ে থাকেন তিনি।
এদিকে ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা মিলন নেছা বলেন, ‘আগে নৌকায় মানুষ পারাপার করতাম। নৌকাতেই থাকতাম। সাংবাদিকরা আমার কষ্ট দেখে নিউজ করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ঘর দিল। সন্তানদের নিয়ে ঘরটিতে থাকবো। আমি খুবই খুশি’।
ছগির হোসেন/এসএমএম/এএসএম