পাপুলের আসনে নৌকা পেতে মরিয়া ১৯ নেতা, প্রার্থী ঘোষণা আজ
আলোচিত লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনের উপনির্বাচনে আগামী ১১ এপ্রিল ইভিইমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ১৯ জন নেতাকর্মী। নৌকা পেতে তারা জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ শনিবার (১৩ মার্চ) সকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি বোর্ডের যৌথ সভায় চূড়ান্ত প্রার্থী ঠিক করা হবে। ফলে সবার দৃষ্টি এখন বোর্ডের সভার দিকে।
তবে এ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। অপরদিকে জাতীয় পার্টি জোটগতভাবে নির্বাচনের আশায় রয়েছেন। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে তারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টায় দৌঁড়ঝাঁপ করছেন।
তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন- এ আসনে বিএনপি ভোটে না আসায় আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী দেবে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করার প্রশ্ন এবার নেই।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন, উপ-নির্বাচনের জন্য গণভবনে মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল গত ১০ মার্চ। এ সময়ের মধ্যে ১৯ জন নেতা-সমর্থক মনোনয়ন ফরম জমা দেন।
তারা হলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হারুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. এহসানুল কবির জগলুল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সামছুল ইসলাম পাটওয়ারী, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ এফ জসিম উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের পিপি জসিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিজবুল বাহার রানা, আওয়ামী লীগ নেতা অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. কায়কোবাদ, আবুল কাশেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন পাঠান, সাবেক মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালের জামাতা সাঈদুল বাকীন ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান, আওয়ামী লীগ সমর্থক মারুফ বিন জাকারিয়া, মাজেদা বেগম ও রেশমা সুলতানা। তারা সবাই নৌকা পেতে তদবির করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পরপর দুইবার জোটগত কারণে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. এহসানুল কবির জগলুল জোটগত কারণে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন নেয়। তখন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ নোমান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। সবশেষ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ নোমানকে ‘ম্যানেজ’ করে এ আসনে নাটকীয়ভাবে এমপি হন কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরোনো লোভে আবারও জোটের অঙ্ক কষছে জাতীয় পার্টি।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ডা. এহসানুল কবির জগলুল বলেন, ‘২০১৪ সালে আমি দলের মনোনয়ন পেয়েছিলাম। জোটগত কারণে নেত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রেখে আমি তা ছেড়েছি। তখন সহিংস বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবিলা করে রাজপথে ছিলাম। দুঃসময়ে দলের নেতাকর্মী ও তরুণ প্রজম্মকে সঙ্গে নিয়ে আমি মানবিক সহায়তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।’
গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে লক্ষ্মীপুরে সকল এমপি, মেয়র, উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছি। রাত-দিন দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দল এবার ত্যাগ-শ্রমের মূল্যায়ন করবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
এদিকে যদি বিএনপির কেন্দ্র এ আসনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয় তবে বেশ কয়েকজন দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। তারা হলেন- খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাবেক নিরাপত্তা সমন্বয়কারী কর্ণেল (অব.) আবদুল মজিদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু।
আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে আমরা স্থানীয় সরকারসহ কোনো নির্বাচনেই আর না যাওয়ার ঘোষণা করেছি। দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে নতুন করে সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে আমিও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’
অপরদিকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন জেলা কমিটির আহ্বায়ক এম আর মাসুদ, নোয়াখালী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিঠু ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ ফায়িজ উদ্দিন শিপন। তবে জাপা এখনও দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি।
এম আর মাসুদ বলেন, জোটগত বণ্টনে এটি (লক্ষ্মীপুর-২) আমাদের আসন। আমরা আসনটি ধরে রাখতে তৎপরতা চালাচ্ছি। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা প্রস্তুত আছি।
কুয়েতে মানব ও অর্থপাচারের মামলায় এ আসনের স্বতন্ত্র এমপি কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুলের সাজা হওয়ায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ৩ মার্চ এ আসনের উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
কাজল কায়েস/এএএইচ/এএসএম