কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ায় শ্বশুরবাড়ি ঠাঁই হলো না রোকসানার
কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ায় এক নারীকে বাড়িতে উঠতে না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোরামারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে নবজাতকসহ ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছেন।
জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ারকুড়া গ্রামের লুৎফর মিয়ার মেয়ে রোকসানা খাতুন (২২)। তিনি একই ইউনিয়নের মহব্বর আলীর ছেলে রাজু মিয়ার স্ত্রী। রাজু মিয়া ঢাকায় একটি খাবার হোটেলে কাজ করেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, এক বছর আগে রাজুর সঙ্গে বিয়ে হয় রোকসানার। গত আড়াই মাস আগে ডাক্তারি পরীক্ষায় রোকসানার গর্ভে কন্যা সন্তানের বিষয়টি নিশ্চিত হন রাজু ও তার পরিবার। এরপর থেকেই রোকসানার ওপর নেমে আসে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির অমানসিক নির্যাতন। কখনো অপরাধ করলে মারপিট, আবার কখনো যৌতুক চেয়ে নির্যাতন চলে আসছিল রোকসানার ওপর।
এ অবস্থায় গত ৮ মার্চ স্বামীর বাড়িতে প্রসব বেদনা উঠলে তাকে রংপুরের সালেহীন ক্লিনিক নেয়া হয়। সেখানে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি কন্যাশিশুর জন্ম দেন রোকসানা। ক্লিনিকে চারদিন থাকার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি স্বামীর বাড়ি আসেন। কিন্তু রোকসানাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়নি শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের লোকজন। এ সময় বাড়ির মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে চলে যান শ্বশুর-শাশুড়ি। সন্ধ্যা পর্যন্ত রোকসানা বাড়ির বাইরে অবস্থান করেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বাবার বাড়িতে নিয়ে যায়।
রোকসানা খাতুনের অভিযোগ, স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজনের চেয়েছিল, ছেলেসন্তান জন্ম দেবেন রোকসানা। কিন্তু কন্যাসন্তানের খবর জানার পর থেকেই তাকে নানাভাবে নির্যাতন করতো স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ তার এক জা। সন্তান জন্মের পর স্বামীর বাড়িতে আসলে তাকে কেউ বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। বরং শ্বশুর ও শাশুড়ি তাকে জানিয়ে দেন, তিনমাস আগে তালাক দেয়ার কথা। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়িতে ঢুকতে না পেরে ফোন করেন ৯৯৯-এ। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসে।
সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা জানান, পুলিশ পাঠিয়ে নবজাতকসহ রোকসানাকে উদ্ধার করে তার বাবার বাড়িতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাহিদ খন্দকার/এমএসএইচ/এমকেএইচ