ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আব্দুল জলিল হোমো ডায়ালাইসিস সেন্টারে বেড়েছে রোগী, বাড়েনি মেশিন

জেলা প্রতিনিধি | নওগাঁ | প্রকাশিত: ১০:০২ পিএম, ১১ মার্চ ২০২১

নওগাঁ সদর হাসপাতালে আব্দুল জলিল হোমো ডায়ালাইসিস সেন্টারে সেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন কিডনি রোগীরা। তবে প্রয়োজনের তুলনায় ডায়ালাইসিস সেন্টারে পাঁচটি মেশিন দিয়ে সেবা দেয়ায় বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। মেশিনের সংখ্যা এবং জনবল বাড়ানো গেলে সেবার মান আরও বাড়বে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নওগাঁ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের আগস্টে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল জলিল নওগাঁবাসীর সুবিধার জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে দুই শয্যা বিশিষ্ট আব্দুল জলিল হোমো ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করেন। এরপর ২০১৩ সালে আরও তিনটি মেশিন বাড়ানো হয়। মোট পাঁচটি মেশিন দিয়ে অদ্যাবধি ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া হচ্ছে। ডায়ালাইসিস চালুর পর এ পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার রোগী সেবা নিয়েছেন। একজন রোগী ডায়ালাইসিসের জন্য প্রথমে ২ হাজার ৯০০ টাকা খরচ হয়। এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে ১ হাজার ৯০০ টাকা করে খরচ হয়। চারটি ধাপ শেষ হলে আবার নতুন করে ২ হাজার ৯০০ টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস শুরু করতে হয়।

কিডনি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি যন্ত্রপাতি। সেবার মান ভালো হওয়ায় অন্যান্য জেলা থেকেও এ হাসপাতালে আসছেন কিনডি রোগীরা। ‘হেপাটাইটিস বি পজিটিভ মেশিন’ না থাকায় রোগীদের অন্যত্র চলে যেতে হচ্ছে। জেলার ১১টি উপজেলা ছাড়াও বগুড়া, জয়পুরহাট জেলা থেকেও কিনডি রোগীরা সেবা নিয়ে থাকেন। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে রোগীর চাপ, অপরদিকে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও জনবল না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

জেলার পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর গ্রামের কিডনি রোগী কৃষক নুরুন নবী মন্ডল (৪৫)। গত দুই বছর আগে হঠাৎ তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ধরা পড়ে প্রয়োজনের তুলনায় ক্রিয়েটিনাইন অনেক বেড়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েও কোনো উপকার হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার দুটো কিনডি নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর গত ৭ মাস থেকে তিনি আব্দুল জলিল হোমো ডায়ালাইসিস সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নুরুন নবী মন্ডলের ছেলে আবু হেনা জানান, বাবার কিডনি রোগ শনাক্ত হওয়ার পর দেশের বাইরে চারবার চিকিৎসা করিয়েছেন। এছাড়া কিডনি ফাউন্ডেশনসহ কয়েক জায়গায়ও দেখানো হয়েছে। ডায়ালাইসিস করার আগ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাবার ব্যাংকে কিছু টাকা ছিল সব খরচ করা হয়েছে। এরইমধ্যে দুই বিঘা জমিও বিক্রি করা হয়েছে। গত ৭ মাস থেকে বাবার ডায়ালাইসিস শুরু করেছেন। বগুড়াতে ডায়ালাইসিস করতে যাওয়া-আসা সহ খরচ বেশি পড়তো। মাস কয়েক থেকে নওগাঁতে করা হচ্ছে। এতে অনেকটা সুবিধাও হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ওষুধ ও দুবার ডায়ালাইসিসসহ প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে।

jagonews24

উল্লাসপুর গ্রামের কিডনি রোগী সাজেদুর রহমান জানান, তিনি একজন পল্লী চিকিৎসক। তার দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। কিডনির চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। ২০১৯ সাল থেকে সপ্তাহে দুবার করে নওগাঁয় সদর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করছেন। নিজের চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন খুবই খারাপ হয়ে গেছে।

ডায়ালাইসিস সেন্টারের সিনিয়র স্টাফ নার্স মেমি খাতুন বলেন, এখানে দুজন নার্স সেবা দিয়ে থাকি। জনবল বাড়ানো হলে সুবিধা হতো। করোনার লকডাউনের সময়ও ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু রেখেছি। যেখানে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়েছি।

ডায়ালাইসিস সেন্টারে দেখভালকারী হায়াত মাহমুদ বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় ডায়ালাইসিস মেশিনের সংখ্যা কম। এজন্য তালিকাভুক্ত রোগীদের সিরিয়াল অনুসারে ডাকা হয়। সেবার মান ভালো হওয়ায় দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি তিনমাস পর পর রোগীদের হেপাটাইটিস বি এবং সি পরীক্ষা করা হয়। যদি কোনো রোগীর পজিটিভ আসে তাকে রেফার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সেন্টারে পজিটিভ মেশিন না থাকায় এ পর্যন্ত ৩০ জন রোগীকে রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে পজিটিভ মেশিনটি জরুরি হয়ে পড়েছে। এ মেশিন থাকলে সেবার মান আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

নওগাঁ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাইদুল হক বলেন, সারাদেশেই জনবল কম। বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সাপ্তাহিক জুম মিটিংয়ে ডায়ালাইসিস মেশিন বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। চিঠি আসার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে, বেডের সংখ্যা বাড়ানো হবে বা নতুন করে আরও ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু হতে পারে।

আব্বাস আলী/এসজে/জেআইএম