ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আমনে এবারও ধরাশায়ী কৃষক

প্রকাশিত: ০৬:২৮ এএম, ২২ নভেম্বর ২০১৫

শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চলতি মৌসুমে রংপুরে আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। ধান কাটা-মাড়াই শুরু করলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ার আশঙ্কায় চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রংপুর অঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলন হলেও এবারও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত না নিলে এবং কৃষকের খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম নির্ধারণ না করলে এবারও ধরাশায়ী হবেন কৃষকরা। ফলে এর প্রভাব পড়বে ইরি-বোরো আবাদে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও চাল আমদানি বন্ধ না করলে এবারও লোকসান গুণবেন চাষিরা।

জেলা কৃষি বিপনন অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে আমন আবাদে কৃষকের মণ প্রতি ৭শ ২০ টাকা থেকে ৭শ ৪০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রকারভেদে প্রতি মণ ধানের বর্তমান দাম ৫শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা মাত্র। কৃষকরা জানিয়েছেন, বীজ বপন, শুরুর দিকে অনাবৃষ্টির ফলে সেচ দিয়ে চারা রোপণ, কাটা-মাড়াই মিলে প্রতি মণ ধান উৎপাদনে যে  খরচ হয়েছে ন্যায্য দাম না পেলে লোকসানের মুখে পড়বেন তারা।

নগরীর সাহেবগঞ্জ এলাকার কৃষক আব্দুল কুদ্দুস জাগো নিউজকে বলেন, আমি এবার সাড়ে ৪ দোন জমিতে ধান আবাদ করেছি। বীজ বপন, পরিচর্যাসহ প্রতি দোন জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় আট থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে যে দাম তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

একই এলাকার কৃষক মজনু জাগো নিউজকে জানান, এবার প্রথম দিকে বৃষ্টির পানি না থাকায় সেচ দিয়ে আমন রোপণ করা হয়েছে। বৃষ্টি না থাকায় মাজরা, পামরি ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ ছাড়াও মজুরির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পরও ধানের আবাদ টিকিয়ে রেখেছি। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার উৎপাাদন খরচ হয়েছে বেশি।

কৃষকদের অভিযোগ, সরকার বেশি দামে বিদেশ থেকে চাল কিনে কম দামে বিক্রি করে বিপুল অঙ্কের টাকা অপচয় করছে। অথচ ব্যবসায়ীরা কম দামে ধান কিনে বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন । কিন্তু সরকার যদি ধান কিনে চাল করতো তা হলে বিদেশ থেকে বেশি দামে চাল কিনে কম দামে বিক্রি করতে হতো না। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসানও গুণতে হতো না।

Fermer

রংপুর কৃষি বিপনন অধিদফতরের মার্কেটিং অফিসার এ এস এম সরওয়ার হাসান জাগো নিউজকে জানান, গত বছর এই সময়ে আমনের বাজার মূল্য ছিল প্রকারভেদে ৬শ ৮০ টাকা থেকে ৭শ ৬০ টাকা পর্যন্ত। অথচ এ বছর সেই ধানের বাজার ৫শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা। যা কৃষকের জন্য মারাত্মক ক্ষতি।

তিনি বলেন, ভারত থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানির ফলে দেশীয় চালের বাজার নিম্নমুখী হয়ে পড়ছে।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, গত বছর জেলায় ১ লাখ ৬০ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করে চাল উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার ৭১৭ মেট্রিকটন।

চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আবাদ করা হয় ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪০৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাত ৭ হাজার ৮২৫ হেক্টর, উফসী এক লাখ ৫০ হাজার ২৩৮ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত এক হাজার ৩৪০ হেক্টর।

উল্লেখিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৪২ হাজার ৮৯৭ মেট্রিকটন।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দাবি করছে, আবাদে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

সূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় ২৯ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে পুরোপুরি জমির ধান কাটা শেষ হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মকবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, শুরুর দিকে খরার কবলে পড়ে কৃষক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর পর দুই দফা বন্যায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কিছু ঘাটতি থাকলেও উৎপাদন ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, উৎপাদনে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

রংপুর কৃষি উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি আজিজুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, সরকার কৃষকের ভাগ্য নির্ধারণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে প্রান্তিক কৃষকরা দেশে কৃষির বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারে। আর এর ফল ভোগ করবে সবাই।

তিনি বলেন, কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য না পেলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বোরো মৌসুমে। এজন্য ভারতীয় চাল আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করাসহ কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের বিষয়ে সরকারের আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তা না হলে এবারও ধরাশায়ী হবেন কৃষক।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি রংপুর সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম বাবু জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর এই সময়ে তার মিলে সাত হাজার মণ ধান কেনা হয়েছিল। অথচ এ বছর তিনি ধান কিনতে সাহস পাননি। সব মিল মালিকদের অবস্থা একই।

এজন্য তিনি ভারতীয় চাল আমদানিকে দায়ী করে বলেন, গত বছর গুটি স্বর্ণা চাল বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, ভোলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে বাজারে ভারতীয় রত্না, স্বর্ণাসহ বিভিন্ন জাতের চালে সয়লাব হয়ে গেছে।  রংপুর থেকে বাগেরহাট, খুলনায় চাল পাঠাতে যে পরিবহন খরচ হয় তার চেয়ে অনেক কম খরচে বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি করা যায়। ফলে বাজারে ভারতীয় চালের আমদানি হওয়ায় তিনিসহ অনেকেই ধান ক্রয় থেকে বিরত আছেন।

তিনি আরও বলেন, মিল মালিকরা ধান না কিনলে কৃষক লাভবান হতে পারবেন না। সরকার বর্তমানে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করে ভারত থেকে চাল আমদানি করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এজন্য তিনি শুল্কারোপ বৃদ্ধির দাবি জানান।

এমজেড/এমএস