ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জয়পুরহাটে হঠাৎ রোটা ভাইরাসের প্রকোপ

জেলা প্রতিনিধি | জয়পুরহাট | প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, ০৪ মার্চ ২০২১

জয়পুরহাটে হঠাৎ করেই বেড়েছে রোটা ভাইরাস বা ই-কলাইজনিত ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। প্রতি দিনই জেলা সদরের আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন প্রায় ৬০ জন। গত এক মাসে এই হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগে শিশুসহ প্রায় দুই হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

জেলার ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় পাঁচশ জন। বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডাক্তারের চেম্বারে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে অধিকাংশই বাড়িতে নিজেরা স্যালাইন খেয়েই ভালো হয়ে গেছেন। বাড়িতে স্যালাইন খেয়ে যাদের ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ হয়নি শুধু তারাই হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু।

রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত ওয়ার্ডে (বেডে) স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে রোগীদের অধিকাংশকেই হাসপাতালের বারান্দা কিংবা করিডোরের মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের। কিছুতেই ডায়রিয়ার প্রকোপ কমছে না।

jagonews24

ডায়রিয়া আক্রান্তদের কেউ মারা না গেলেও প্রায় প্রতিদিন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ২/১ জন রোগীকে এ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়। গত প্রায় দেড় মাস ধরে চলছে এ অবস্থা।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, শীতের শেষে বছরের এ সময়টা আবহাওয়ার তারতম্যের পাশাপাশি অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতার কারণে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। একই কারণে প্রতি বছর এ সময় কমবেশি ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত নানা বয়সী প্রায় ২ হাজার ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে। বুধবার হাসপাতালে ভর্তি ৫৭ জন ডায়রিয়া রোগীর মধ্যে ২৪ জনই শিশু।

জয়পুরহাট পৌর এলাকার বুলুপাড়া গ্রামের ৬ মাসের শিশু আবদুল্লাহর বাবা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে মিনিটে ২-৩ বার পায়খানা করছে। যা খাচ্ছে তাই বের হয়ে যাচ্ছে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার তুলাট গ্রামের ১০ মাস বয়সী রমজানের বাবা জাহেদুল আলম ও একই উপজেলার কয়তাহার গ্রামের ১৫ মাসের জাকারিয়ার বাবা রুবেল হোসেন জানান, তাদের বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা ও বমি শুরু হয়। স্যালাইন খাওয়ার পরও ভালো না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে এখন একটু কমে গেছে।

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খিয়ারপুর গ্রামের হোসেন আলী, নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার মর্জিনা বেগম ও বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, প্রথমে বমি ও পরে পাতলা পায়খানা আর পেটের ব্যথায় ভোগেন তারা। পরে অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হন।

jagonews24

হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স (সেবিকা) নাসিমা সুলতানা জানান, প্রতিদিন সুস্থ হয়ে এক দল বাড়ি চলে যাচ্ছে, অন্য দল চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছে। এমনিভাবে গড়ে ৫০ জনেরও বেশি নতুন ডায়রিয়া রোগী দিনে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালে নতুন ও পুরাতন মিলে সব সময় ৬০ থেকে ৭০ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি থাকছে।

হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি করোনা চিকিৎসার জন্য দেওয়া হয়। ফলে ছোট ২টি ঘরে মাত্র ৫টি বেডে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের করিডোর ও বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। শিশুসহ সব শ্রেণির রোগীই হাসপাতালে আসছে। মূলত রোটা ভাইরাস বা ই-কলাই জীবাণু থেকে ডায়রিয়া হচ্ছে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও পানি কম খাওয়ার কারণেও ডায়রিয়া হতে পারে। খাবার আগে হাত সাবান দিয়ে ধৌত করতে হবে। শৌচকাজ সারার পর ছোট থেকে বড় সবারই ভালোভাবে জীবানমুক্তকরণ সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি।

এছাড়াও ডায়রিয়া হয়ে গেলে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। রোগীদের অতি প্রয়োজনীয় স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধসহ ২৪ ঘণ্টা তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে এ অবস্থা কেটে যাবে।

জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মিজানুর রহমান মিজান জানান, গত দেড় মাস থেকে এ হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। তাদের চিকিৎসা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। ডায়রিয়ার কারণ হিসেবে মৌসুম পরিবর্তনকে আমরা মনে করছি। সবাই যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে তাহলে আমরা খুব তাড়াতাড়ি এ থেকে মুক্তি পেতে পারি।

জয়পুরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. ওয়াজেদ আলী জানান, বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটছে, আবহাওয়ার তারতম্যের পাশাপাশি অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতাসহ নানা কারণে এটি হচ্ছে। বছরের এ সময়টা আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ভাইরাস সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যা অস্বাস্থ্যকর খাবার ও দূষিত পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে এ রোগের সৃষ্টি করে।

রাশেদুজ্জামান/এফএ/এএসএম