যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে মারতেন ব্যাংক কর্মকর্তা, তদন্তে মিলল সত্যতা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে স্ত্রী দায়ের করা যৌতুক ও নির্যাতনের মামলায় ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সরাইল সদর শাখায় ঋণ বিভাগে কর্মরত।
রশিদ সরাইল উপজেলার অরুয়াইল গ্রামের হিম্মত আলীর ছেলে। বর্তমানে এ মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে ব্যাংকের স্বপদে বহাল রয়েছেন। মামলার বাদী সাদিয়া খন্দকার ঢাকা তিতুমীর কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ হইতে অনার্স পাশ করে বর্তমানে মাস্টার্স পরীক্ষার্থী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সরাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা ছানা খন্দকারের বড় মেয়ে সাদিয়া খন্দকারকে চার লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন আব্দুর রশিদ। বিয়ের সময় রশিদের দাবি অনুযায়ী সাদিয়ার বাবা উপহার বাবদ জামাইকে ঘরের আনুষঙ্গিক মালামাল ও দুই ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কারসহ তিন লাখ টাকার মালামাল দেন। রশিদ-সাদিয়া দম্পতির ২০ মাস বয়সী এক সন্তান রয়েছে।
সন্তান জন্মের পর থেকে আব্দুর রশিদ নানাভাবে স্ত্রী সাদিয়াকে অবহেলা ও নির্যাতন করে আসছেন। এর মধ্যে সাদিয়ার গর্ভে তার দ্বিতীয় সন্তান আসে। প্রায় চার মাস আগে রশিদ পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে স্ত্রী সাদিয়ার ওপর নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে যৌতুকের টাকার জন্য গর্ভবতী স্ত্রীকে শিশু সন্তানসহ শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেন আব্দুর রশিদ।
বাবার বাড়িতে সাদিয়ার কোলজুড়ে আসে খুশবু নামে এক কন্যা সন্তান। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর স্ত্রী সাদিয়ার অনুরোধে আব্দুর রশিদ শ্বশুরবাড়িতে আসেন। এসময় সদ্য জন্ম নেয়া কন্যা সন্তানকে পিতা রশিদের কোলে দিয়ে স্ত্রী সাদিয়া স্বামীকে অনুরোধ জানান, 'দুই শিশু সন্তানসহ তাকে যেন স্বামীর ঘরে ফিরিয়ে নেন।' কিন্তু রশিদ সাফ জানিয়ে দেন ৫ লাখ টাকা যৌতুক ছাড়া সাদিয়াকে বাড়িতে তুলে নেবেন না। এনিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়।
একপর্যায়ে রশিদ স্ত্রী সাদিয়া মারধর করে এবং গলাটিপে ধরেন। এতে তার কোলে থাকা নবজাতক কন্যা শিশুও আহত হয়। এসময় মেয়েকে বাঁচাতে পিতা ছানা খন্দকার এগিয়ে আসলে রশিদ তার শ্বশুরকেও মারধর করেন। পরে সাদিয়া ও তার নবজাতক সন্তানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর বাদী হয়ে সাদিয়া সরাইল থানায় স্বামী আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী সাদিয়া খন্দকার জানান, ব্যাংকে ঋণ বিভাগে চাকরির সুবাদে আব্দুর রশিদ নানা অপকর্মে জড়িত। সরাইলের অনেক প্রভাবশালীকে অনৈতিকভাবে ব্যাংকের ঋণ পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। মামলা করায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আব্দুর রশিদের পক্ষ নিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন।
জানতে চাইলে আব্দুর রশিদ দাবি করেন, ‘সাদিয়ার আচার-আচরণ একঘেয়েমি স্বভাবের। তাকে শায়েস্তা করতেই বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কোনো যৌতুক চাওয়া হয়নি। মামলা আমি আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবিলা করব।’
সরাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন বলেন, ‘আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩)-এর ১১(গ) ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।’
এএএইচ/জিকেএস