‘চিংড়ি পোকা’র নামে নিধন করা হচ্ছে কোটি টাকার লবস্টার
পটুয়াখালীর উপকূলবর্তী উপজেলা কলাপাড়ায় সাগর থেকে ‘চিংড়ি পোকা’ নাম দিয়ে অসংখ্য গলদা চিংড়ি, কাঁকড়া ও কচ্ছপের বাচ্চা নিধন করছে এক শ্রেণির অসাধু জেলে। উপজেলার কুয়াকাটাসহ অন্তত ২০টি পয়েন্টে এজন্য প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে তিন শতাধিক অবৈধ ‘পোকা জাল’।
প্রতিবছর শীতেই ‘চিংড়ি পোকা’ নিধনের নামে গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক সম্পদ নিধনে মেতে ওঠে একদল অসাধু মৎস্যজীবী। জানা গেছে, এই কাজে ভোলার চরকুকরি মুকরি, সোনার চর থেকে শুরু করে সুন্দরবনের দুবলার চর পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার জেলে জড়িত।
দিনের পর দিন তাদের এমন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক সম্ভাবনাময় ব্লু ইকোনোমির চরম ক্ষতি হলেও নীরব প্রশাসন ও মৎস্য অধিদফতর।
নিষিদ্ধ বেহুন্তি জালের চেয়েও বেশি ঘনত্বের এই পোকা জালের সবচেয়ে বড় শিকার গলদা চিংড়ি বা লবস্টার। বড় লবস্টারগুলো বেশি দামে বিক্রি হলেও ছোটগুলো রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় ‘রাবিশ’। যা দিয়ে তৈরি হয় পোল্ট্রির খাবার।
এই রাবিশ ব্যবসায় জড়িত নাসির উদ্দিন নামে একজন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এসব রাবিশ কিনে ঢাকা-চিটাগাং পাঠাই। তারা এগুলো দিয়ে পোল্ট্রির খাবার বানায়। রাবিশ না থাকলে পোল্ট্রির খাবার পাবে কোথায়?’
দৈনিক চুক্তিতে রাবিশের কারখানায় কর্মরত শ্রমিক আনিস বলেন, ‘এগুলো (লবস্টার) বড়টা কেজি ১০০০-১২০০ টাকা বেচা-কেনা হয়। আর ছোটগুলো (যেগুলো মূলত রাবিশ হিসেবে পরিচিত) বিক্রি হয় ৭০০ টাকা কেজিতে।’
জানা যায়, কুয়াকাটা,কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে এসব লবস্টার বিক্রি হচ্ছে ১২ শ থেকে ২ হাজার টাকা কেজি দরে। তবে খুচরা হিসেবে পর্যটকদের কাছে বিক্রি হয় আরও অনেক বেশি দামে। অর্থাৎ গড়ে একটি বড় লবস্টার বিক্রি হয় ৬ থেকে ৮ শ টাকায়। অথচ এসব অসাধু জেলেরা হাজার হাজার লবস্টার শুকিয়ে ৭০০ টাকা প্রতি মণ দরে বিক্রি করছে।
পুরো শীতের মৌসুমে কুয়াকাটার শুটকি পল্লী, লেম্বুরচর, তিন নদীর মোহনা, খাল গোড়া, গঙ্গামতি, কাউয়ার চর, বিজয় চর, কলাপাড়ার ঢোস, মৌডুবির, চর বোগলা, জাহাজ মারা, চর হেয়ার, আন্ডার চর, সোনার চর, বরগুনার হরিনঘাটা, শুভ সন্ধ্যা, চর বিহঙ্গ, লালদিয়া ও সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকায় পুরো শীত মৌসুম জুড়ে চলে এই পোকা জালের দৌরাত্ম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক বলেন, ‘আসলে এগুলো (লবস্টার) যে পোকা না, সেটাই অনেকে জানে না। যে যেরকম করে পারে ধরে। আর জাল যে অবৈধ সেটা আমিও জানি। কী করব? পেটের টানে কাজ করি।’
তিনি জানান, কুয়াকাটাতেই অন্তত ২০ জন ব্যবসায়ী পোকা জালের নৌকায় দাদন দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ইউএসএআইডি/ইকোফিশ পটুয়াখালী জেলা সহকারী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি জানান, ‘আমরা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে এ বিষয়টি সরেজমিনে দেখেছি। অত্যন্ত কষ্টদায়ক একটি বিষয়। সরকার যেখানে বঙ্গোপসাগরকে নিয়ে ব্লু ইকোনোমি এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে , সেখানে ব্যাপক সম্ভাবনাময় সামুদ্রিক সম্পদ লবস্টারগুলোকে রাবিশ বানিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। লবস্টার সারা বিশ্বে জনপ্রিয় ও মূল্যবান। অথচ অবৈধ জাল ব্যবহার করে দেশের সম্পদ নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। এ সম্পদ রক্ষা করা গেলে দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে এ উপকূল।’
এ বিষয়ে কথা বলা হলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি জানানোর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। খুব গুরুত্ব সহকারে দ্রুতই অভিযান শুরু করব আমরা।’
এসএমএম/এসএস/এমএস