জাতীয় পার্টির নেতার খামারে ৩৫টি হরিণ
সুন্দরবন উপকূলীয় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের নন্দকাটি গ্রামের গলঘশিয়া নদীর তীরে ব্যক্তি উদ্যোগে চিত্রা হরিণের খামার গড়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা আব্দুস সাত্তার মোড়ল। খামারটিতে এখন হরিণের সংখ্যা ৩৫টি। শখের বসেই খামারটি গড়েছেন এই নেতা। প্রতিদিন সেখানে হরিণ দেখতে ভিড় করেন বিভিন্ন এলাকার শত শত দর্শনার্থী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খামারটিতে বড় হরিণের সংখ্যা ২৯টি। শাবক (বাচ্চা) রয়েছে ছয়টি। ছাগলের মতো হরিণের খাবার দেন খামারটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।
খামার মালিক মোড়ল আব্দুস সাত্তার জাতীয় পার্টির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালে খুলনার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাঁচটি হরিণ নিয়ে লালন-পালন শুরু করি। শখের বসেই শুরু করেছিলাম। তবে এখন সেটি খামারে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রতিদিন হাজারও মানুষ এখন খামারটি দেখতে আসেন।’
তিনি জানান, জেলায় এমন হরিণের খামার আর নেই। হরিণের খামার লাভজনক ব্যবসা। এর মাংসের চাহিদাও রয়েছে অনেক। শিক্ষিত বেকার যুবকরা চাকরির পেছনে না ছুটে হরিণের খামার করলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল আমার কাছ থেকে ছয়টি হরিণ নিয়ে লালন-পালন করে এখন ১১টি হরিণের মালিক বনে গেছেন। ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমার খামারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছিল। এরপর থেকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় আমার খামারটির সনদপত্র নবায়ন নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে আমাকে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদফতর আইনি জটিলতা দেখিয়ে আমার প্রত্যয়ন বন্ধ করে রেখেছে’, বলেন খামার মালিক মোড়ল আব্দুস সাত্তার।
জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, ‘বন মন্ত্রণালয় বলছে, আমার খামারটি আকাশপথে সুন্দরবন থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরত্বে। খামার হতে হবে ৩০ কিলোমিটার দূরে। নদীপথে আমার খামারটি ৬৩ কিলোমিটার দূরে ও সড়কপথে ৫০ কিলোমিটার। আকাশপথে কত কিলোমিটার দূরে সেটি আমার জানা নেই।’
আইনি জটিলতায় আটকা আছে হরিণের খামার করতে আগ্রহী আশাশুনি উপজেলার হাড়িভাঙা গ্রামের বাসিন্দা সোলাইমান হুসাইন নামের এক উদ্যোক্তার।
তিনি বলেন, ‘সাত্তার সাহেবের খামারটি দেখে উদ্যোগী হয়েছি খামার করতে। তবে খামার গড়ে তোলার আগেই আইনি জটিলতার কারণে পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে। অল্প বিনিয়োগে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে হরিণ পালনে।’
‘হরিণের খামার দ্রুত বর্ধনশীল। প্রতি তিন বছরে একটি মায়া হরিণ দুটি বাচ্চা দেয়। এদের সাধারণ ছাগলের মতো খাবার দিতে হয়। এদের রোগবালাইও নেই।’
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, আইনি জটিলতা না থাকলে খামার গড়ে তোলার সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ওয়াইল্ড লাইভ বিভাগ) নির্মল কুমার পাল জানান, আব্দুস সাত্তার মোড়লের খামারটি আকাশপথে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে। যে কারণে খামারটির লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছে না।
তিনি বলেন, হরিণের খামারের লাইসেন্স পেতে হলে অবশ্যই খামারটি আকাশপথে ৩০ কিলোমিটার দূরে হতে হবে। এর বাইরে লাইসেন্স দেয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই।
আকরামুল ইসলাম/এসআর/এমএস