এজাহার পরিবর্তন, পুঠিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে মামলা
এজাহার পরিবর্তনের অভিযোগে পুঠিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করে নূরুল ইসলামসহ অপর তিনজন বাদী হয়ে রাজশাহী জেলার পুঠিয়া সহকারী জজ, ১ম আদালতে আটজনকে বিবাদী করে একটি নির্বাচনি মোকাদ্দমা দায়ের করেন।
রোববার (২৪ জানুয়ারি) সকালে দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আল-আমিন বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, নূরুল ইসলাম রাজশাহী জেলার পুঠিয়া থানার সড়ক ও পরিবহন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে তিনি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন এবং সর্বোচ্চ ভোট পান।
কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফলাফল পরিবর্তন করে মো. আব্দুর রহমান পটলকে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করেন। মোকদ্দমাটি শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট আদালত বিবাদীগণের বিরুদ্ধে পুঠিয়া থানা সড়ক ও পরিবহন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নবনির্বাচিত কমিটির সমস্ত কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও কারণ দর্শানোর আদেশ প্রদান করেন। আদালত উক্ত অন্তবর্তী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রচারিত হলে মামলার বিবাদী মো. আব্দুর রহমান পটল এবং তার সহযোগীরা নুরুল ইসলামকে বিভিন্নভাবে জীবননাশের হুমকি দেন।
২০২০ সালের ১০ জুন সন্ধ্যা থেকে নুরুল ইসলামের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন ১১ জুন সকাল ১০টায় তার পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন যে, নুরুল ইসলামের মরদেহ পুঠিয়া এএসএস ইট ভাটার মধ্য পড়ে আছে।
মৃত নূরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানা ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে একটি হত্যা মামলা করার জন্য পুঠিয়া থানায় যান এবং তার ভাষ্যমতে তার পিতার হত্যার সাথে জড়িত আটজন আসামি মো. আ. রহমান পটল (৫৫), আহসানুল হক মাসুদ ওরফে নেতা মাসুদ (৪৮), মো. মিঠু ওরফে গুন্ডা মিঠু (২৮), গোলাম ফারুক (৫৫), মো. কে এম শাহীন (৬০), মো. নুরুল আমিন (৫৫), মো. মতিন (২৫) ও মো. আ. রশিদের (৪৮) বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল করেন।
কিন্তু এজাহারে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ থাকায় ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ এজাহারটি রেকর্ডভূক্ত না করে সংবাদদাতা নিগার সুলতানাকে তা সংশোধনপূর্বক উক্ত বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনরায় এজাহার দিতে বলেন।
তৎপ্রেক্ষিতে নিগার সুলতানা উক্ত বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনরায় থানায় এজাহার দাখিল করলে ওসি সাকিলউদ্দিন আহমেদ তা গ্রহণ করেন এবং কিছু সাদা কাগজে নিগার সুলতানার স্বাক্ষর নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন।
পরবর্তীতে সংবাদদাতা নিগার সুলতানা পুঠিয়া থানা হতে এজাহার ও প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) এর কপি (পুঠিয়া থানার মামলা নম্বর ৮ তারিখ: ১১/০৬/২০১৯) সংগ্রহ করেন দেখেন যে, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামির নাম ও ঠিকানা সম্বলিত কলামে কোন আসামির নাম না লিখে সেখানে ‘অজ্ঞাতনামা’ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং এজাহারের বর্ণনা পরিবর্তনের পাশাপাশি আসামির সংখ্যা আটজনের পরিবর্তে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- আ. রহমান পটল (৫৫), এ কে এম শাহীন (৫৫), নুরুল আমিন (৫৫), মো. মিঠু গুন্ডা মিঠু (২৮), মো. আ. মতিন (২৫), মো. রশিদ (৪৮)সহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়জন।
উক্ত রিট পিটিশনের রুল নিশি ইস্যুর সময় বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিগার সুলতানা কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার এজাহার পরিবর্তন বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক একটি প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
এর প্রেক্ষিতে মো. মেহেদী হাসান তালুকদার, বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, রাজশাহী কর্তৃক বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধান শেষে নিগার সুলতানার দায়েরকৃত এজাহার গ্রহণ না করে কারসাজিমূলকভাবে এজাহার দায়েরের ক্ষেত্রে পুঠিয়া থানার তৎকালীন ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের সন্দেহজনক ভূমিকা রয়েছে মর্মে সুষ্পষ্ট প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
উক্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর এই মর্মে রায় প্রদান করেন।
এসএমএম/জেআইএম