সমস্যায় জর্জরিত নকলায় ভোট এলেই মেলে আশ্বাস
বেড়েছে পৌর কর কিন্তু বাড়েনি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বৃষ্টি এলেই জলাবদ্ধতা আর ময়লা আবর্জনার মধ্যেই বসবাস শেরপুরের নকলা পৌরবাসীর। তাদের অভিযোগ, ভোটের সময় এলেই দেয়া হয় মন ভোলানো আশ্বাস। যদিও বরাবরের মতো নানা প্রতিশ্রুতি প্রার্থীদের কণ্ঠে।
অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা আর রাস্তার পাশে ময়লার দুর্গন্ধের মধ্যে দিয়ে বসবাস করে আসছে শেরপুরের নকলা পৌরবাসী। পৌরসভার বয়স ২০ বছরেরও বেশি হলেও এখনো মেলেনি পূর্ণ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। পৌরশহরে নেই পাবলিক টয়লেট, এতে ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। অথচ নিয়মিত পৌর কর দিচ্ছেন পৌরবাসী। এছাড়া পৌরসভার মধ্যে নেই যানবাহনের কোনো স্ট্যান্ড। সড়কের ওপর গাড়ি দাঁড় করিয়েই যাত্রী উঠানামা করায় যানজটের সৃষ্টি হলেও নিয়মিত টোল দিতে হচ্ছে যানবাহন মালিকদের।
পৌরবাসীর অভিযোগ, ভোটের সময় এলে প্রার্থীরা উন্নয়নের নানা আশ্বাস দেন। কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। নকলা-চন্দ্রকোনা সড়কের অটোচালক কালা চান বলেন, ‘আমাদের গাড়ি রাখার কোনো স্ট্যান্ড নাই। রাস্তার ওপরেই গাড়ি রাখতে হয়। এজন্য জ্যাম লাইজ্ঞা যায়। কোনোসময় ভিআইপি আসলে গাড়ি রাখার কোনো জাগাই থাকে না। অথচ আমরা প্রত্যেক বছর এই স্ট্যান্ডের জন্য টোল দেই। যেই মেয়র হবে, দাবি একটাই আমাদের স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা কইরা দিতে হইবো।’
শহরের হাজী জাল মাহমুদ কলেজের বিপরীত পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শহরের বর্জ্য নিষ্কাশন ড্রেন। সেই ড্রেনের ওপর দিয়েই যাতায়াত করতে হয় ওই মহল্লার মানুষের। ড্রেনের ওপরের ঢাকনা ভেঙে আছে দীর্ঘদিন ধরে। কয়েকবার আবেদন করেও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তনের দেখতে পায়নি মহল্লাবাসী। নেই সড়ক বাতি। পারিবারিক বর্জ্য অপসারণের জন্য গাড়িও পায় না এই এলাকার মানুষ, অভিযোগ স্থানীয়দের।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর চেহারা ভালো হলেও, দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। যার কারণে বাসা বাড়ির সামনেই ময়লার স্তুপ করে রাখতে হয় পৌরবাসীর। সময় মতো তা অপসারণ না করায় দুর্গন্ধ তৈরি হয়, বাড়ে মশার উপদ্রব। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের লোকমান হোসেন বলেন, ‘দুর্গন্ধের কারণে বাসাবাড়িতে টেকা দায়। নিয়মিত কর দিলেও কোনোদিন ময়লা নিতে গাড়ির দেখা পাননি তিনি।’ আকলিমা বেগম বলেন, ‘বিকাল হলেই ঘরে কয়েল লাগাতে হয়। নতুবা মশার যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ হয়ে যাই।’
যদিও ইতোমধ্যে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পাবলিক টয়লেট ও নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডসহ অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করার আশ্বাস দিয়েছেন বর্তমান মেয়র ও সরকার দলীয় প্রার্থী মো. হাফিজুর রহমান লিটন । তিনি বলেন, ‘আমি মেয়র হবার পর যে উন্নয়ন করেছি তা অকল্পনীয়। অন্য সময় এত উন্নয়ন হয়নি বলেও দাবি করেছেন তিনি। কিছু কাজ বাকি আছে, যা এবার জয়ী হয়ে সম্পন্ন করবো ইনশাআল্লাহ।
এদিকে জয়ের জন্য মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সাবেক মেয়র ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলের কেউ নয়; বলছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান ও মো. আনোয়ার হোসেন আনারের অভিযোগ, তাদেরকে প্রচারণা করতে দেয়া হচ্ছে না। সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের হুমকির ভয়ে তাদের প্রচারণায় আসছেন না তার সমর্থকরা।
অপরদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনে হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. এনামুল হক রিপন। তিনি বলেন, সাধারণ ভোটাররা যদি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলে আমার জয় সুনিশ্চিত।
নকলা পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান লিটন নৌকা প্রতীকে, বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত মো. এনামুল হক রিপন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নকলা পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান নারিকেল গাছ প্রতীকে এবং উপজেলা পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন আনার জগ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শানিয়াজ্জামান তালুকদার। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছে। এখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এবং কোনো প্রার্থী অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
নকলা পৌরসভায় মোট ভোটার ২৭ হাজার ১৫৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৮ জন ও নারী ভোটার ১৪ হাজার ১৫১ জন। ১২টি কেন্দ্রের ৮১টি ভোটকক্ষের মাধ্যমে আগামী ৩০ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
ইমরান হাসান রাব্বী/এআরএ/এমকেএইচ