অনলাইন ক্লাস রয়ে গেছে নাগালের বাইরে
করোনা ভাইরাস যেন পাল্টে দিয়েছে সব কিছু। এর প্রভাব যেমন পড়েছে জীবন ধারায় তেমনি শিক্ষা ব্যবস্থায়ও। ফলে নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পরিবর্তে সারা দেশের ন্যায় ঝিনাইদহেও চলছে অনিয়মিত অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম। এতে মেধা যাচাই যেমন হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের তেমনি তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় থাকছেন অভিভাবকরা।
২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর এপ্রিল মাস থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরে জুন থেকে জেলায় শুরু হয় অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম।
কিন্তু দারিদ্য, অ্যান্ড্রয়েড ফোন না থাকা, ইন্টারনেটের অভাবসহ নানা কারণে শতকরা ৬৫ ভাগ শিক্ষার্থী সুযোগ নিতে পারছে না অনলাইন ক্লাসে। শহরকেন্দ্রিক কিছু শিক্ষার্থী এ সুবিধা নিলেও কতটুকু বুঝতে পারছেন পড়া তা নিয়ে শঙ্কার শেষ নেই।
শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, প্রাথমিকে জেলায় ৯০৭টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৮২ হাজার ছয়শ ৯১ জন আর মাধ্যমিকে ৪৮১টি বিদ্যালয়ে এক লাখ ৮০ হাজার ৮৫১ জন। এরমধ্যে প্রাথমিকে গড়ে ৩৫% এবং মাধ্যমিকেও প্রায় ২৫% শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের সুবিধা নিয়েছে। আর এসব ক্লাসের সাথে জড়িত প্রায় ৭০ জন শিক্ষক। সাধারণত সংসদ টিভি, ইউটিউব, শিক্ষকদের ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের ছেলে ও কোদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র কাজী শোয়াইব। দিনমজুর বাবা স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট কিনে না দিতে পারায় একদিনও সুযোগ নিতে পারেনি অনলাইন ক্লাসের।
ওই শিক্ষার্থীর বাবা কাজী হুমায়ন বলেন, দিনমজুরি করে সংসার চালাই। যেখানে পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা ভাত তুলে দিতে হিমশিম খেতে হয় সেখানে কি করে সন্তানদের এতো খরচ করে অনলাইন ক্লাস করাবো। এটা আমাদের কাছে দুঃস্বপ্নের মত।
তবে শহরের কিছু শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের সুবিধা নিলেও শঙ্কার শেষ নেই অভিভাবকদের। জেলা শহরের কাঞ্চননগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া অটোপাস করে উঠেছেন চতুর্থ শ্রেণিতে আর বিষয়খালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠেছেন লাবিব শেখ।
তাদের অভিভাবক নাজমা খাতুন ও লতিফা খাতুন জানান, অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সন্তানদের লেখাপড়া চলমান রেখেছিলাম। সরকারের নির্দেশে সমাপনী শেষ করে তারা পরবর্তী শ্রেণিতে উঠেছে। কিন্তু এতে তো আমাদের সন্তানদের মেধার যাচাই হল না। একটা বিষয় পাঠ শেষ করে সে কি জ্ঞান অর্জন করলো তা বোঝা গেল না। ফলে অন্ধকারেই থেকে গেল জ্ঞানের সীমা।
অনলাইন ক্লাস নেওয়া এক স্কুল শিক্ষক সাইদুর রহমান টুটুল বলেন, সরকারের নির্দেশে অনলাইন ক্লাস নিচ্ছি। ফেসবুক, জুম অ্যাপ, ইউটিউব, অনলাইন স্কুল পেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা যেটা শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি তারা আদৌ বুঝতে পারছে কি না তা বোঝার উপায় নেই। কিছু শিক্ষার্থীদের ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা বাড়ির কাজ জমা দিতে বলেছি। কিন্তু কাজ জমা দিচ্ছে শতকরা ১০ জনের কম।
শহরের ওয়াজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক অর্ধেন্দু হালদার জানান, অনলাইন ক্লাস নিচ্ছি ঠিকই কিন্তু অপ্রাপ্তির জায়গাটা হচ্ছে সরাসরি কথোপোকথনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে পারছি না। আবার আমরা যে অনলাইন ক্লাস নিচ্ছি তার কোনো পারিশ্রমিক পাচ্ছি না, নিজের টাকায় নেট কিনে কাজ করতে হচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এন এম শাহজালাল জানান, এখন অনলাইন ক্লাস চালানো হলেও পরবর্তীতে যখন স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি তখন যদি পুনরায় আগের শ্রেণির পাঠ্য বিষয়গুলো কিছুদিন চর্চা করা হয় তাহলে ক্ষতিটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। এতে কিছুটা হলেও শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে জানান, যতদিন সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা না আসবে ততোদিন স্কুল বন্ধ থাকবে এবং অনলাইনে পাঠদান চলবে। এই মুহূর্তে এর বাইরে কিছু করার নেই।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসএমএম/এমএস